এক মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রচারে ব্যয় ১২ কোটি টাকা!

লেখক: Amadersomaj
প্রকাশ: ১ বছর আগে


সময় সংবাদ রিপোর্টঃ নিজেদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচার করতে চায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। উন্নয়ন প্রচারের জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘উন্নয়নের মহাসড়কে জয়রথে বিজয়ের জয়ধ্বনি’। প্রকল্পটি এরই মধ্যে অনুমোদনও পেয়েছে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সমাজসেবা অধিদপ্তর। উন্নয়ন প্রচারে খরচ হবে প্রায় ১২ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে, অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে উন্নয়ন প্রচারে এত বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

পরিকল্পনা কমিশন এবং সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকারের উন্নয়ন ধারাবাহিকতায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের অবদানগুলো গণমাধ্যম এবং সামাজিকমাধ্যমে প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উন্নয়নের মহাসড়কে জয়রথে বিজয়ের জয়ধ্বনি শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে। দুই বছর মেয়াদি এ প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয় ১১ কোটি ৯৮ লাখ ৪ হাজার টাকা। সম্প্রতি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প প্রস্তাবটি অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

nagad

সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর প্রস্তাব করা হলেও সম্প্রতি প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এখনো প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ হয়নি। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার পর বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হবে। বাস্তবায়ন মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত। যেহেতু অনুমোদন পেতে দেরি হয়েছে, তাই বাস্তবায়ন শুরুর পর মেয়াদ বাড়ানো হবে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও জনবান্ধব উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো গণমাধ্যম এবং সামাজিকমাধ্যমে প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা ও তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন করা হবে।

উন্নয়ন প্রচারে ১২ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়ার যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পের যৌক্তিকতা এবং প্রকল্প প্রস্তাবনায় পরিকল্পনা কমিশন সন্তুষ্ট হয়েছে বলেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

তবে বর্তমান অর্থনৈকিত সংকটের সময়ে শুধু উন্নয়ন প্রচার-প্রচারণায় এত বড় অঙ্কের টাকা ব্যয়ের প্রকল্প নেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওয়াকিবহাল বিশেষজ্ঞরা।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জনগণের টাকায় জনগণের জন্য উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে জানান অধিকার তাদের আছে। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলা হচ্ছে। অথচ শুধু উন্নয়ন প্রচার-প্রচারণার জন্য এ ধরনের প্রকল্প নেওয়া কতটুকু যৌক্তিক—সেটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কারণ, ১২ কোটির মতো বিশাল অঙ্কের টাকায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য আলাদা একটা প্রকল্প নেওয়া যেত।

তিনি বলেন, এ অর্থ প্রচারের কাজে ব্যয় না করে সরাসরি জনস্বার্থে ব্যয়িত হলে আরও বেশি সময়োপযোগী এবং জনস্বার্থে উপকার হতো। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাজই হচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের উপকারে কাজ করা। এ ধরনের মন্ত্রণালয়ের জন্য উন্নয়ন প্রচারের চেয়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করাটা গুরুত্বপূর্ণ।

উন্নয়ন প্রচারে নেওয়া প্রকল্পে বিভিন্ন খাতে ব্যয় নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। এ প্রকল্পে মূল উদ্দেশ্য প্রচার ও বিজ্ঞাপন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অথচ প্রচার কাজে ব্যবহারের জন্য যানবাহন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ২৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনাকাটায় ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, অডিও-ভিডিও বা চলচ্চিত্র নির্মাণে ২ কোটি, প্রশিক্ষণে ৫০ লাখ, পরামর্শক খাতে ৫০ লাখ, সম্মানী ২০ লাখ, সেমিনার, অনুষ্ঠানাদি খাতে ৫৫ লাখ টাকাসহ বিভিন্ন খাত মিলিয়ে মোট ১১ কোটি ৯৮ লাখ ৪ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এ ধরনের প্রকল্পে মূল উদ্দেশ্যের তুলনায় আনুষঙ্গিক খাতে ব্যয় হয় বেশি। কাজেই জনগণের অর্থের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠে আসে। এ ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজেদের সুবিধা অর্জনের দিকে বেশি মনোযোগী হন। বিশেষ করে আর্থিক সংকটের মুখোমুখিতে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলা হচ্ছে, সে সময়ে এ ধরনের প্রকল্প কতটা যৌক্তিক, সেটা বিবেচনা করা উচিত।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের অবদানগুলো গণমাধ্যম তথা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা, বিভিন্ন নীতি, আইন, বিধিমালা, কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে উপকারভোগী এবং সম্ভাব্য উপকারপ্রার্থী জনগণকে অবহিতকরণের মাধ্যমে উন্নয়নের শ্রোতধারায় জনগণকে সম্পৃক্ত করতে নানা প্রচারণা ও উদ্দীপনামূলক কার্যক্রম এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে ডিএএস ব্র্যান্ডিং ও এ-সংক্রান্ত দক্ষতা বৃদ্ধি করা।



IT Amadersomaj