কৃষক লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে যত অপকর্ম সোহাগের, পর্ব ১

লেখক: Amadersomaj
প্রকাশ: ১ বছর আগে


নিজস্ব প্রতিনিধি॥ ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি, মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় শত্রুকে ফাঁসানো, জিম্মি করে মা-মেয়েকে ধর্ষণের পর আলামত নষ্ট, চোরাকারবারী, মাদককারবারী, পাহাড় কাটা, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ, জাল দলিল তৈরি করে ভূমি দখল, হত্যাচেষ্টা, হুমকি চাঁদাবাজি ও গ্যাসের চোরাই সংযোগসহ এক ডজন অভিযোগে অভিযুক্ত ২নং জালালাবাদ কৃষক লীগের সভাপতি মোঃ সোহাগ। গ্যাসের চোরাই সংযোগ দিয়ে এলাকায় যিনি গ্যাস চোর সোহাগ নামে পরিচিত।

কখনও কৃষি কাজ না করে কৃষক লীগের সভাপতি হয়েই এলাকায় গড়ে তুলেছেন অপরাধের স্বর্গরাজ্য। এমন কোন অপরাধ নেই যা তিনি করেন না। তিনি কৃষকলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে চলেন। করেন রাতের বেলায় নিরীহ মানুষকে ধরে ছিনতাই, বেআইনী আটক ও মুক্তিপণ আদায়। অভিযোগ রাতের বেলায় বিএনপির নেতার সাথে বসেন গোপন বৈঠকে। এলাকায় তৃণমূল কৃষক লীগ নেতাদের মুখে মুখে গ্যাস চোর সোহাগ ওরফে গ্যাস সোহাগ হাইব্রিড কৃষকলীগ নেতা। তিনি মূলত বিএনপির উত্তরসূরী হিসেবে কাজ করেন।

এমন অভিযোগের অনুসন্ধান করতে গিয়ে সাম্প্রতিক গ্যাস সোহাগের অপরাধ কর্মকান্ডের কয়েকটি অডিও ক্লিপের সন্ধান পাই। অডিও ক্লিপে শোনা যায়, তিনি এক বয়স্ক মহিলাকে শাসাচ্ছেন। তিনি যেনে তাকে (মহিলা) ও তার মেয়েকে ধর্ষণ করার কথা কাউকে না বলে এমনটাই অনুরোধ করছেন। ঐ মহিলা সোহাগের বীর্য পরীক্ষা করে ধর্ষণ প্রমানের কথা বললে সোহাগ বলেন হতাশার কথা। সোহাগ জানান, ধর্ষণের পর পিরিয়ড হলে সকল আলামত নষ্ট হয়ে যায়। আমি সব জানি। তুমি বেশি কথা বলো না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাবাকে মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় জেলে ঢুকিয়ে জিম্মি করে মা ও মেয়েকে ধর্ষণ করে সোহাগ। বাবাকে মুক্তির মিথ্যা আশ্বাসে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের বিষয়টি বুঝতে পারলে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় ওই নারী। তখন মামলা করতেও বাঁধা হয়ে দাড়ায় সোহাগ। তার বিরুদ্ধে মামলা দিলে হত্যার হুমকিসহ মেয়ের বিয়ে হবে না মর্মে মামলা হতে বিরত রাখেন ওই নারীকে। ফলে এই যাত্রায়ও আইনের কঠোর বিচার থেকে বেঁচে যান তিনি।

এর আগেও ধর্ষণ মামলায় জেল খেটেছেন তিনি। নাজমা বেগম(২৬) নামের এক নারী বাদী হয়ে ২০২০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-৪ চট্টগ্রামে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। যার নারী ও শিশু মামলা নং- ৩৮২/২০। গণধর্ষণের এই মামলায় গ্যাস সোহাগ ছিলেন তৃতীয় আসামি। উক্ত মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগের পর মুক্ত হয়েই কৌশল বদলিয়েছে ধর্ষণের। কৌশল বদলিয়েছে করে যাচ্ছেন একের পর এক ধর্ষণ। শত্রু পেলেই দিচ্ছেন মিথ্যা ধর্ষণ মামলা। তার নিজেই মামলা তদন্ত করে ৭ দিনের মধ্যে চার্টশীট দিবেন বলে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ভুক্তভোগীরা বলছেন, বায়েজিদ এলাকার ডেবার পাড়, মুক্তিযোদ্ধা কলনী পাড়া, ব্যাংক পাহাড়, শ্যামলছায়া এলাকাসহ আশপাশের কোন বাসিন্দা সোহাগকে চাঁদা না দিয়ে বাড়ি নির্মাণকাজ করতে পারেন না। এলাকায় কেউ বাড়িঘরের নির্মাণকাজ শুরু করলেই সোহাগ দলবল নিয়ে গিয়ে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহের দাবি জানায়। কেউ তাকে নির্মাণসামগ্রীর কার্যাদেশ না দিলে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হয়। আবার কার্যাদেশ পেলে বাড়তি দামে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করা হয়। এ রকম বিভিন্ন ঘটনায় এলাকাবাসী এই কিশোর গ্যাং সদস্যদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন।

চাঁদাবাজির জন্য অভিযুক্ত সোহাগ একটি হত্যা মামলারও অন্যতম আসামি। এলাকায় অন্যের যায়গা দখল করে সেখানে নিজস্ব অফিসঘর করেছেন তিনি। ওই অফিসঘর থেকে পরিচালনা করছে কিশোর গ্যাং। গ্যাং সদস্যরা সেখান থেকে এলাকার মাদক কারবার ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন।

গ্যাস চোর সোহাগ বিরুদ্ধে রয়েছে গ্যাস চুরির অভিযোগও। তিনি কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহায়তায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে অবৈধ গ্যাস লাইন দিয়ে আয় করেছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। জানা যায়, এই এলাকার সিডি এর জায়গা বদ্দারহাটের একটি বাড়ির কাগজপত্র দেখিয়ে নুরুল আলম বাবুল ও মনি আক্তার দম্পতিকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ এনে দেয় এই সোহাগ। এছাড়াও শ্যামল ছায়া আবাসিকের আরও একটি ৮ তলা ভবনে অবৈধ গ্যাস সংযোগের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে তার তিনটি বস্তিতে রয়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ।

শুধু তাই নয়, এই ভূমিদস্যুর রয়েছে অক্সিজেন খ্যাত বন উজাড় করার মতো আরও একটি বদ অভ্যাসও। পাহাড় কাটা, ভূমি দখল, বন উজাড় করার সাথে তার রয়েছে সরাসরি সম্পর্ক। তার হাত থেকে রেহাই পায়নি বায়েজিদ ডেবার পাড় এলাকার পাহাড়ের টিলায় অবস্থিত জাতীয় গ্রিডের একটি উচ্চ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের বৈদ্যুতিক খুঁটিও। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায, খুঁটিটির এক পাশ থেকে মাটি সরিয়ে দেয়াল তৈরি করে কয়েকটি প্লট তৈরি করেছেন তিনি। বর্তমানে জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইনের খুটিটি বিপদজনক অবস্থায় পড়ে আছে। বৃষ্টির পরে মাটি সরে গিয়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের বিপর্যয়। যদিও এ বিষয়টি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম খুলশী ডিভিশনের নজরে আনা হয়েছে।

জানা যায়, তার বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর-চট্টগ্রামসহ দেশের একাধিক থানায় এক ডজন মামলা রয়েছে। এর মধ্যে নগরীর আকবর শাহ থানায় ধর্ষণসহ বায়েজিদ থানায় তিনটি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে মামলা রয়েছে। তবে টাকার জোরে (পিসিপিআর) এ অভিনব কায়দায় কারসাজি করান তিনি। আমাদের হাতে আসা তিনটি মামলায় তার নাম ও তার পিতার নাম ইচ্ছাকৃতভাবে ভিন্ন ভিন্ন দেয়া হয়েছে যাতে খুঁজলে তার মামলার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।



Source link

IT Amadersomaj