জীবনবোধের গল্প – মোহাম্মদ শেখ কামালউদ্দিন স্মরণ

লেখক: মোহাম্মদ শেখ কামালউদ্দিন স্মরণ
প্রকাশ: ৪ মাস আগে
মোহাম্মদ শেখ কামালউদ্দিন স্মরণ, লেখক ও কলামিস্ট।

নানান সংস্কৃতির বাংলাদেশ হলেও, বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক নতুন, নতুন সংস্কৃতি যোগ হচ্ছে। আমি মনে করি  সেলফি আমাদের এই সময়ের সংস্কৃতি। আমি কিন্তু সেলফি সংস্কৃতির  বদনাম করার জন্য লিখছি না। আমি বরাবরই জীবনের সঙ্গে সহজ বোধ করার একটা পূর্বশর্ত শিখেছি, তা নিজের জীবনে প্রয়োগ করে শান্তি পেয়েছি । সেই মূলমন্ত্র হলো: যুগের হাওয়াতে ভেসে যা কিছু আসে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নিজেকে ভারাক্রান্ত করার মধ্যে অশান্তি ছাড়া আর কিছুই নেই। যুগটাকে শত্রু বানিয়ে ফেলার কোন মানে হয় না। তবে যুগের সব কিছুই আমার দরকার নেই ।

প্রযুক্তির সকল আশীর্বাদই আমার প্রয়োজন মেটায় না, বরং অনেক সময় আমার ক্ষতিই করে । কিন্তু সেটার জন্য রাগারাগির কিছু নেই । সেটা আমার বেছে নেবার বিষয় ।  জীবনের কোন কিছুকেই আমি অস্বীকার করতে নারাজ। এটাই আমার ভালো করে বেঁচে থাকতে চাওয়ার প্রথম কৌশল । এগুলো কোথাও শিখে পড়ে আসিনি । জীবনটাকে বাঁচতে , চলার পথে সব শিখছি , আর যা শিখেছি, তাই বলছি ! নিজের বোধবুদ্ধি বুঝগুলো নিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্টের মধ্যে থাকি সারাক্ষণ ।

কত লোকে কত কথা বলছে! কিছুই পুরোপুরি নিচ্ছি না, তবে কিছুই পুরোপুরি ফেলছিও না! এই খেলাধূলা, এই জীবনের সঙ্গে মেলামেশা, তাকে বুঝতে চাওয়া , আমার ভালোই লাগে। জীবনকে সুন্দর করে বাঁচতে চাওয়ার তাগিদটুকুকে বাদ দিয়ে আমি কিছুই করতে পারি না। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় নায়ক জীবন নিজেই । এই কথাটা বলতেও আমার খুব ভালো লাগে। আমার সবচেয়ে প্রিয় যেই পরিচয়কে আমি বহন করতে ভালোবাসি , তা হলো এইটুকু, যে আমি জীবনকে বুঝতে চেয়েছি , বাঁচতে চেয়েছি , তাকে ভালোবাসার যোগ্যতা অর্জন করতে চেয়েছি সব সময় ।

জীবন সম্পর্কে এই আপোষহীন অবিচ্ছিন্ন কৌতুহল আমার প্রত্যেকদিনের সাথী । এটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় সত্য যে , আমি জীবনের সঙ্গে আমার প্রত্যেকদিনের সংসারে সুখী হতে চেয়েছি সরল অর্থে , ভালো থাকতে চেয়েছি , এবং সেই প্রশ্নে নিজেকে ছাড় দিতে একদমই চাই না । আমার সবচেয়ে উজ্জ্বল পরিচয় হলো আমি জীবনের ভক্ত , তার শিস্য, তার সন্তান  এবং তার প্রেমিক, লেখক হিসেবে কোন স্বীকৃতি নিতে চাইনি, কারণ, আমার হাতের লেখা এত বেশি ভালো না ।

 আমার এই লিখাটা, আমার জীবনেরই একটি অংশ । ইদানিং আরেকটু কঠিন হয়েছি । যখনই নিজের মধ্যে একটা ঘ্যানঘ্যানে কন্ঠ আসতে চায় , আমি জটিল চোখে নিজেকে খেয়াল করি । নিজেকে শাসন করি । আমাকে এখন আর শাসন করার কেউ নেই বলে কি আমি নিজের শাসন থেকেও বঞ্চিত হবো নাকি? তাই আমি নিজেই নিজেকে আটকাই । খেয়াল রাখি , কখন মনটা ঘ্যানঘ্যানে হয়ে উঠতে চাইছে । এইটুকু নজরদারীর আর খবরদারীর  আমার চিরদিন প্রয়োজন থাকবে । কারণ, আমি মানুষ । যা কিছু আমার পক্ষে ভালো , তার থেকে পা হড়কে বারেবারে পিছলে পড়াই আমার ধর্ম । আর যতবার আমি পড়ে থাকি , ততবার আমাকে টেনে তোলাই আমার দায়িত্ব ।

যখনই কেউ বলেন , “এই যুগের সব কিছু নষ্ট হয়ে গ্যাছে, আমাদের সোনার যুগের সময়টা অন্যরকম ছিল। অর্থাৎ ভালো ছিলো। এই কথা শোনার সাথে সাথে মন টানটান হয়ে সাবধান হয়ে যায় । নিজেকে বোঝাই , এরকম কথা আমি কখনো বলবো না। কারণ, আমি বিশ্বাস করতে পারবো না, আমার সময়ের সব কিছুই নষ্ট । আমার সময়ের সব কিছুই মন্দ । আমি বরং এভাবেই নিজের চিন্তাকে সাজিয়েছি , যে সকল যুগেই কোন না কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল । একেকটা যুগ আসে একেক হাওয়া নিয়ে। আমি এই যুগে জন্মেছি । আমার সময়ে ভালো কিছুই নেই , এই কথাকে আমি কথার কথা হিসেবেও প্রশ্রয় দিতে পারি না । এটা প্রকৃতির নামে দুর্নাম  । জগতের পক্ষে, জীবনের পক্ষে ওকালতি করি , এই বদনাম চুপচাপ হতে দিতে পারি না । একে মনে মনে খন্ডন করি । তাছাড়া শুধু তর্কে জেতার জন্যেই নয় , আমি আসলে আমার সময় ছাড়া আর কোন সময়ে জন্মাইনি। পৃথিবীর আর সমস্ত ভালো রাস্তা, যার সাথে তুলনা করা যায় এই সময়কে, সেই সমস্ত ভালো রাস্তা – ই আমার নাগালের বাইরে। আমার আগেই ঘটে যাওয়া ইতিহাস ! যে ইতিহাস আমাকে বিষণ্ণ করে, আমাকে আমার নিজের চোখে ঠকে যাওয়া কোন প্রাণ হিসেবে প্রমাণ করতে চায়, সেই ইতিহাস আমার কাছে বর্জনীয় ।

যে ইতিহাস , যে অতীত, আমাকে ভালো লাগায় , আমাকে শান্তি দেয়, আমাকে আনন্দ দেয় , আমাকে, আমার জীবনটাকে বাঁচাতে শক্তি যোগায়।  সেই ইতিহাসকে আমি নেড়েচেড়ে কিছুক্ষণ দেখতে রাজী আছি । কারণ, তার মধ্যে আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা থাকতেও পারে । কিন্তু যে ইতিহাস, আমাকে শুধু আফসোস দেয় , শুধু হা-হুতাশ করায় , “আহারে কি ছিল সেই সময়! গোলা ভরা ধান আর গোয়াল ভরা গরু” এই হাহাকারের উচ্চারণ আমাকে কখনোই স্পর্শ করে না । যে ইতিহাস , যে অতীত আমাকে কৃতজ্ঞ হতে শেখায় , আমি তার দিকে ফিরে তাকালেও তাকাতে পারি সময় হলে । মোদ্দা কথা ,আমার মন যখন হা-হুতাশ, ঘ্যানঘ্যান, অভিযোগ ইত্যাদিতে আগ্রহ বেশী দেখায় , আমি বেঁচে থাকার কৌশল হিসেবে সেটাকে অগ্রাহ্য করার চর্চাই করি শক্ত মনে সচেতনভাবে । এটা ছোটবেলায় পারতাম না । এই বেলায় চেষ্টা করতে করতে একটু-আকটু শিখেছি ।  এই এক মনের ভেতর বহু মন আছে। আমি সেই মনকে ধারণ করি সবার উচ্চে , যে মন আমার জন্য আমার জীবনকে সহজ রাখে, আমার বেঁচে থাকাকে উজ্জ্বল করে , আমার আনন্দবোধকে  লালন করে ।

আমি আমার সেই মনকে সবচেয়ে বেশী পাত্তা দিতে চাই , যেই মন আমাকে জীবনের ছন্দকে বুঝতে সাহায্য করে, প্রয়োজনে আমাকে কঠিন হতে বলে , আবার কখনো  নরম হয়ে প্রাণের কাছে এসে বসে। আমি  আমার সেই মনকে সবচেয়ে বেশী বিশ্বাস করি। যেই মন আমাকে আমার জীবনের জন্য যোগ্য করে, তৈরী করে , তার দিকে আমাকে ঠেলতে থাকে সারাক্ষণ । এই মন আমি কোথায় পেয়েছি তা আমার জানা নেই । কিন্তু আমার বহু মনের ভেতরে এই মনটাই সবচেয়ে কঠিন, কিন্তু সবচেয়ে বিশ্বস্ত , বিশ্বাসযোগ্য , বন্ধুর মত । আমার এই মনটাকে ভরসা করেই আমি চলি ।

এই কারণেই, সময়ের স্রোতে ভেসে আসা কোন কিছু নিয়েই আমি বিচলিত দেখতে চাই না নিজেকে । জীবনের স্রোতে অনেক কিছু ভেসে আসবে । নৌকা আমার । বৈঠা আমার। সমুদ্র আমার । নদী আমার। যা কিছু ভালো লাগে তাই নৌকাতে তুলে নেবো । যেটা ভার মনে হবে, সেটা আবার জীবনের স্রোতেই ফেরত দেবো  । এইটুকু দায়িত্ব নেবো না নিজের বৈঠার? তাই যদি নিলাম, তাহলে এখানে এত ঘ্যানঘ্যান , এত জীবনের নামে কলংক লেপনের সুযোগ কোথায় ? জীবন ঠিকই আছে। সময়ও ঠিক আছে। সবই ভালো । জীবনকে বাঁচতে গেলে , জীবনের কথা শুনতে হবে আগ্রহী হয়ে । তা না হলে জীবনের কোন দায় নেই, আমাকে ভালো লাগায় আচ্ছন্ন করে রাখার । এটা আমার মন্ত্র । এটা আমার জন্য কাজ করে । তাই শুরুতেই বলি , আজ আমি সেলফির বিরুদ্ধে লিখছি না। এগুলো এসে যায় । এগুলোকে কাটিয়ে চলতে শেখাই আমার কাজ ।

আজ বলবো সেলফির কথা । সেলফি-যুগে প্রবেশ করার পর গত কয়েক বছরে অনেককিছু দেখা হলো । আমার জীবনে সেলফির ভূমিকা কি? কতটুকু সেই গল্পই এলোমেলো করে খানিকটা লেখা যেতে পারে  । এটা খুব সিরিয়াস গল্প নয় । তবে আমার ভেতরে আবেগের নানান রকম ঢেউ যখন তখন খেলে যায় । যে কোন তথাকথিত হালকা প্রসঙ্গঃ থেকে মাঝে মধ্যেই আমি যথেষ্ঠ গম্ভীর অবস্থায় নিজেকে পাই । আবার যে কোন তথাকথিত গুরুগম্ভীর পরিস্থিতির মধ্যেও আমার মনে নানান রকম তথাকথিত হালকা চিন্তা চলে আসে। তথাকথিত বলছি , কারণ, সত্যিই এগুলো সবই আপেক্ষিক ব্যাপার । মৃত্যুর মত তথাকথিত গম্ভীর বিষয় নিয়েও মানুষ সম্মানের সঙ্গেই উৎসব করে তাকে উদযাপন করে  । আবার জন্মের মত তথাকথিত আনন্দের বিষয় নিয়েও মানুষ ন্যায্য কারণেই আক্ষেপ করতে পারে ! কোন কিছুরই সেরকম ধরাবাঁধা নিয়ম নেই । যে যেমন  করে অনুভব করে, যে যেরকম ভাবনার সঙ্গে সহমত পোষণ করে, সেটাই তার সত্য , সেটাই তার জন্য ন্যায্য । বাইরের কেউ তার বিচারক হতে পারে না ।

এই দিক থেকে আমার জীবনকে খুব ন্যায্য মনে হয় । জন্মে গিয়েই নিজের পরিস্থিতিটা বুঝতে হবে । সেই বোঝাবুঝিতে একটা সময় কেটে যাবে। তারপর বোঝাবুঝি সারা হলে কিছুকাল সেই বুঝ-কে ব্যবহার করে এবার জীবনের যাত্রাটাকে খানিকক্ষণ উপভোগ করা যাবে। এই করতে করতেই ব্যাস চলে যাবার সময় হয়ে যাবে, যদি না তথাকথিত অপঃঘাতে জীবনটা হারাই ।

 

জীবনের ন্যায্যতাটা এইখানেই যে, আপনার জ্ঞ্যান মুখস্থ করে নিয়ে আমার জীবনে প্রয়োগ করলে , তেমন কিছুই লাভ হবে না । প্রত্যেকের সঙ্গে জীবনের হিসাব আলাদা । তুলনার সুযোগ নেই । নেই বলেই জীবনকে ন্যায্য ডাকতে পারি । সকলের চ্যালেঞ্জ এক নয় । কিন্তু সকলেই চ্যালেঞ্জে আছে দারুন। কারোরটাই একটুও কম নয় । সেটা মাপার কোন কায়দাই নেই !  ন্যায্যতা মানে আমাদের কাছে অনেকটা “সমতার” মত কিছু একটা । প্রকৃতির মধ্যে আমি এই প্রবণতা দেখিনি । সে সমান হবার তাগিদ অনুভব করে না। মহত্ত্বের প্রতি প্রকৃতির বাড়তি কোন দুর্বলতা আমি দেখি না । তার ঝড় খুবই নিষ্ঠুর । যে টিকে থাকবার সে টিকে থাকে !  উলটা পালটা ফুল জন্মায় এখানে সেখানে  । সবই সুন্দর । কিন্তু কেউই কারোর মত  নয় । জীবনকে আমি ন্যায্য ভাবি, এইজন্যে নয় , যে সে সমান । বরং তার ন্যায্যতাটা আমার কাছে এইভাবে ধরা দেয়, যে সে নিশ্চিতভাবে অসমান সকলের জন্য । সমানভাবে ভিন্ন সকলের জন্য । এই জায়গাটাকে আমার বিস্ময়কর লাগে।

যাই হোক, ইতিমধ্যেই একটা গম্ভীর স্বর নেমে এসেছে । অনেক চেষ্টা করেছিলাম সেলফি সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে গম্ভীর হবো না । পারলাম না । হয়েই গেলাম। এবার একটু পাল্টাই ।  এই রচনার নাম হতে পারে , “ জীবনবোধের গল্প”! ঠিক আছে , এই নামটাই তাহলে থাক । ওর নিজেরই ছবি । সে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে জানালা ধরে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম , “বাহ! সুন্দর তো! এটা কার তোলা?” সে বললো লজ্জ্বিত মুচকি হেসে “ আমার”! আমি তো থতোমতো হতবাক তাজ্জব অবাক! আরে বলে কি! দেখে তো মনে হচ্ছে আর কেউ তুলে দিয়েছে , এমন নিবিড় আনমনা ভঙ্গী! তারপর মনে হলো , তা করা গেলে তো খুব ভালো ব্যাপার! এর মধ্যে একটা স্বাবলম্বীতা আছে । একটা মানুষ নিজেই শখ করে নিজের ছবি তুলেছে ,তার মধ্যে খানিকটা অভিনয় করে নিজের মুখে একটা আনমনা উদাস ভাব এনেছে! সেই মুহুর্তকে সে ক্যামেরা বন্দী করেছে তারপর  । এখানে অনেকগুলো আয়োজন আছে । এটুকু করার পরে সে সেই ক্যামেরা বন্দী মুহুর্তকে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে । তার বন্ধুদের সঙ্গে । সব কিছুই এখানে সুন্দর । এর মধ্যে এই মানুষটাকে বিচার করার মত কি আছে? সে কার কি ক্ষতি করেছে এই প্রক্রিয়াতে? কারোরই করেনি !

তাহলে সমস্যা কি? সমস্যা নেই কোন । সমস্যা হলো , আমি যখন আমার তোলা আমার আনমনা মুহুর্তের ছবি অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিলাম, আমার বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে নিলাম, তারপর কেউ যদি সেই সৌন্দর্যের যথার্থ তারিফ না করে , তাতে যদি আমার মন খারাপ হয়, তাহলে  শুধু সেই মন খারাপটুকু , সেইটুকুই আমার কাছে সমস্যার ব্যাপার ! আর কিছুই নয়! কেননা , সেই মন খারাপের বোধটুকু  আমার বেঁচে থাকার পক্ষে অন্তরায় হয়ে যায়, কিছুক্ষণের জন্য আমার মুখের হাসিকে মলিন করে দেয় । আমি তো জীবনবাদী/জীবনমুখী/জীবন-প্রেমিক মানুষ ! আমার সব কিছুকে বিচার করার এই একটাই নিক্তি ! ব্যাপারটা কি আমার ভালো থাকার পক্ষে গেল নাকি বিপক্ষে?

ভেবে দেখেছি , এই যে  আমার ভালো লাগার জন্য আমাকে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় ,  সেটা আমার কাছে সমস্যার ব্যাপার । পরমুখাপেক্ষিতা জীবনে যতটা কমিয়ে আনা যায়, ততই তা মংগলকর । তা না হলে সেটাতে আমার বেঁচে থাকা আর আমার হাতে থাকে না । যেই আমিকে আয়নাতে দেখে আমার নিজের চোখে ভালো লাগছে, নিজেকে নিজের মত করে সাজিয়ে আমার নিজের চোখেই নিজেকে খুব সুন্দর লাগছে, সেটা তো অত্যন্ত আনন্দেরই ব্যাপার ! তারপর তার একটা ছবি তুলে আমি যখন তা আর কারোর সঙ্গে ভাগ করে নিই, সে যখন আমার প্রশংসা করে, সেটা যদি আমার ভালো লাগে, তাতেও কোন সমস্যা নেই । সেটাও আনন্দের ব্যাপার । সমস্যা হলো , আমি যদি সেই প্রশংসাতে আসক্ত হয়ে পড়ি । আমি যদি তার প্রশংসার জন্য অপেক্ষা করি । মুখিয়ে থাকি । সেটা না পেলে আমি যখন বিমর্ষ বোধ করি । সেটা সমস্যার ব্যাপার । আমার মনের চাবি অন্যের হাতে চলে গ্যাছে । সেটা সমস্যার ব্যাপার ।  সেই মুহুর্তে আমার ভালো লাগার ক্ষমতা অন্যের হাতে চলে গ্যাছে । আমার মনের ভেতরের হাসির রিমোট কন্ট্রোলার অন্যের হাতে চলে গ্যাছে । সেটা আমার চোখে খুবই সমস্যার ব্যাপার ।

সেলফির মধ্যে কোন সমস্যা আছে বলে মনে হয় না। একটা মানুষ একটা ক্যামেরা ব্যবহার করে নিজের ছবি তুলতেই পারেন , তাতে তার আনন্দ হয় , আর সেটা ভাবলে আমারো আনন্দ হয় । শুধু লক্ষ্য রাখার মত ব্যাপার এইটুকুই যে সেই সেলফিকে ঘিরে যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে , সেটা যদি বিষণ্ণতার একটা সফল এবং নিশ্চিত উৎপাদনশীল খাত হয়ে দাঁড়ায় , তাহলে , তা আমার চোখে একটা সাবধান হবার বার্তা দেয় । আমি সব কিছুকেই পরখ করে তবে জীবনে ঢুকতে দিই। এমনি এমনি দিই না । তাই  আমি এই জায়গাটাকে খেয়াল করতে চাই । যে কাজগুলো করে আমি আনন্দ পাই , তা আমার জীবনে থাকুক । কিন্তু যে ক্রিয়া আমার জীবনে দুঃখ তৈরী করে, সেটার দিকে আমার ঝুঁকে পড়ার কি কারণ থাকতে পারে? জেনেবুঝে এই প্রক্রিয়ার ভেতরে আমি কেন ঢুকবো? যদি ঢুকে থাকি, সেখানে আমি কেন থাকবো? আমি তো আমার মনের ভেতর থেকেই একটা সার্বক্ষণিক অতৃপ্তি আর অস্থিরতার বার্তা পাচ্ছি । তাহলে সেখানে আমার যাতায়াত অব্যাহত থাকবে কেন?

আনন্দের যে মাত্রা অতি উচ্চ , তা রোজ রোজ আসে না। সব কিছু নিয়েই মানুষ উন্মাদনার উৎসবে মেতে থাকে না । উত্তেজনা, উন্মাদনা, আর আনন্দ এক ব্যাপার নয় । এর মধ্যে মাত্রাগত তফাত আছে । আনন্দ বোধের উচ্চ মাত্রা মাঝে মধ্যে আসে । আনন্দের একটা সহজ স্বাভাবিক শান্তির স্রোত আছে । সেটা সব সময়ই থাকতে পারে। সেটাই রবির গানে শুনেছিলাম । “আনন্দধারা বহিছে ভুবনে”! এই আনন্দের ধারা আতশবাজি ফোটানোর কোন উত্তাল আনন্দ নয় । এই আনন্দ স্বাভাবিক সহজ শান্ত আনন্দ। যা চুপচাপ জীবনের সবখানে সারাক্ষণ বয়ে যেতে থাকে । যেটুকু ছুঁতে পারি , তা আমারই লাভ । আমি সেই আনন্দকে চিনতে চেষ্টা করি সব কিছুর ভেতরে । এবং সেই আনন্দবোধকে যা কিছু আক্রান্ত করে , সেটাকেও চিনতে চাই । এইটুকু প্রশান্ত আনন্দের পরশে থাকাকেই আমি সুখ বলতে বুঝি । সুখ আমার কাছে আতশবাজি ফুটিয়ে সারাক্ষণ নেচেকুঁদে বেঁচে থাকার ব্যাপার নয় । জীবনের প্রতি একটা সহজ মাত্রার আকর্ষণ আর আগ্রহ নিয়ে যদি ঘুমাতে যেতে পারি , সকালে উঠেও যদি সেই আগ্রহ জারি থাকে, তার মানে আমার কাছে এটাই , যে আমি জগতের সেই প্রবাহিত আনন্দধারার স্পর্শেই আছি । এই আনন্দবোধটুকু আমার বেঁচে থাকার আগ্রহের রক্ষাকবচ ।

 অসুন্দর ভাবার মধ্যেই আমি সমস্যা দেখি । দেখার ভেতরে ঘাটতি থাকলেই মানুষ নিজেকে অসুন্দর ভাবতে পারে। এটাই আমার বিশ্বাস , যা আমি প্রচার করি ।  অন্যের অসম্পূর্ণ অপরিণত  চোখ দিয়ে দেখলেই মানুষ নিজেকে অসুন্দর ভাবার মত হীনমন্যতার  দিকে ঝুঁকতে পারে। নিজেকে একা ঘরে নিজেই অপমান করতে পারে।  যে মানুষ প্রকৃতির সাথে যুক্ত, ইশ্বরের সাথে যুক্ত , আত্মার সাথে যুক্ত , জগতের প্রাণশক্তির সাথে যুক্ত, তার পক্ষে নিজের চেহারাকে আলাদা করে অসুন্দর ভাবা অসম্ভব । অসুন্দর শব্দটির যথার্থ প্রয়োগ হতে পারে মানুষের স্বভাবের ক্ষেত্রে, তার চিন্তার ক্ষেত্রে , তার কর্মের ক্ষেত্রে ! অথচ এর সবচেয়ে প্রচলিত প্রয়োগ হয় মানুষের চেহারার ক্ষেত্রে ! একে ঘিরে কত ব্যবসা, কত কি! এটা অধিক প্রচলিত বলেই আমার চিন্তার উপরে তা কেউ চাপিয়ে দিতে চাইলেই আমি সেটাকে অনুমোদন দেব না । পৃথিবীর সকলে একসাথে এই বোকা চিন্তাটার সাথে সহমত  হলে সেটা জগতের বুদ্ধির সামগ্রিক অধঃপতন হয়েও থাকতে পারে  । তার জন্য এই ক্ষেত্রে আমি আমার বুদ্ধিকে সন্দেহ করছি না । আমি আমার বোধকে বিশ্বাসকে সন্দেহ করছি না । তাদের সকলের  জন্য আমি আন্তরিকভাবে  দুঃখিত ।

আমি যদি এই কাদায় পড়ে নাকানীচুবানী খেতে থাকি , তাহলে আমার পক্ষে উচিৎ হবে, আমার  সৌন্দর্যের বোধ এবং সংজ্ঞ্যাকে পুনঃনির্ধারণ করা, পুনরায় তার নির্মাণ করা । আমার নির্মিত সৌন্দর্যের সংজ্ঞা যেন আমার উপলব্ধ সত্যের সংগে সংগতিপূর্ণ হয় , তা যেন আমার বেঁচে থাকাকে উজ্জ্বল করে , আমার অস্তিত্বের বোধকে শান্তি দেয় , স্বস্তি দেয় , সম্মান দেয়, মর্যাদা দেয়  । আমার যে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা আমার ভেতরে আমাকে ছোট করে রাখে , অপূর্ণতার বোধ দেয় , অর্ধেক করে রাখে , সেই সংজ্ঞাকে লালন করার মত গোষ্ঠিগত পাগলামীতে আমি যোগ দিতে চাই কি? আমি চাই না । আমার জায়গাটাকে ব্যবহার করে আমি নিজে যেটা চাই না, যেটা আমার পক্ষে ক্ষতিকর বলে জেনেছি , সেইসব জ্ঞ্যানকেই  প্রচার করি , সেই বোধকেই বিলিয়ে দিতে চাই । জগতে যদি কাজ বলতে কিছু থাকে আমার, তাহলে সেটা হলো এইসব বোধ ছড়ানোর কাজ , যা আমার অস্তিত্বকে সুন্দর রেখেছিল একটা জীবন বাঁচতে গিয়ে । যা আমাকে সম্মান দিয়েছিল । শান্তি দিয়েছিল । যদি কিছু প্রচার করার থাকে, কবিতায় , বা রাজনীতিতে, বা ছবিতে, বা হাসিতে, বা নীরবতায় , তাহলে প্রচার করার জন্য আমি নির্বাচন করতে চাই, এরকম কোন সৌন্দর্যের টিপস বা মন্ত্র , যা আমাকে আমার জীবনের সঙ্গে সুখে শান্তিতে সম্মানে স্বস্তিতে জড়িয়ে রাখে । বেঁধে রাখে । আত্মমর্যাদাপূর্ণ মানুষ , যে নিজেকে আর অন্যেকে সম্মান করার মধ্যে দিয়েই জীবনকে বাঁচে , আমার চোখে তার চেয়ে সুন্দর কোন মানুষ পৃথিবীতে হতে পারে না । আমার সৌন্দর্যের  সংজ্ঞ্যাকে আমি এইভাবে নির্মাণ করে নিয়েছি । এর চেয়ে অধিক আকর্ষণীয় সংজ্ঞ্যা আমি যতক্ষণ না পাই , ততক্ষণ আমি এই সংজ্ঞাটাকেই ,  মানুষের ক্ষেত্রে আমার functional definition of beauty বলে স্থির করে নিয়েছি ।

 যে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা আমাকে সারাক্ষণ অপেক্ষায় রাখে, অস্থির রাখে , কখন কে এসে আমার একটু প্রশংসা করে যাবে, তারপর আমি সুন্দর হবো , যতক্ষণ না তার চোখে আমি সুন্দর হলাম , ততক্ষণ আমি আমার চোখে সুন্দর হবো না, মনটাকে ছোট করে রাখবো , যে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা আমাকে এইসব বোধের ভেতর দিয়ে নিয়ে যায়, সেটা এই পৃথিবীতে যতই  বিজ্ঞাপনী গান বাজিয়ে শিকড়-বাকড় ছড়িয়ে বসুক না কেন , তা যতই একটা সফল এবং বহুল সমাদৃত চেহারা নিয়ে জগতে বিরাজ করুক না কেন, তা আসলে আমার দিক থেকে বাতিল করে দেয়া যায়! তা আসলে একেবারেই পরিত্যায্য, এবং ফেলে দেবার মত!

প্রশংসা ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভাবা যাক । আমরা যখন যে কোন কিছুর জন্যই প্রশংসার অপেক্ষায় থাকি , তখন আমরা প্রাণের ভেতরে  খুবই গরীব হয়ে থাকি । যে কাজটা আমি করেছি , বা হয়েছি , নিজের তাগিদে , নিজের গরজে , সেটার সম্পর্কে কেউ একটা ভালো কথা প্রকাশ করতে পারে । সেটা এক ব্যাপার ।আমি সেটার কথা বলছি না । সেই প্রকাশকে আমার ভালো লাগতে পারে। সেটা স্বাভাবিক । সেটা একরকমের স্বীকৃতিও বটে । কিন্তু সেগুলো মূল কর্মের অনেক পরের ব্যাপার ! মুল কর্মের ভেতরেই তার পূর্ণ প্রাপ্তি রয়েছে । মূল ঘটনাটি ঘটেছে সম্পূর্ণ নিজস্ব একটা প্রক্রিয়াতে । তার একটা নিজস্ব প্রাপ্তি আছে । প্রশংসা ঘটে তার অনেক পরে।প্রশংসা হলো একটা byproduct কিন্তু একটা কাজ করার সময়েই আমার মূল চিন্তা, উপলক্ষ্য যদি এই হয় যে আমি তার জন্য ভূয়সী প্রশংসা পাবো, সেটা না পেলে আমি মন খারাপ করবো , নিজের কাজটাকেই সন্দেহ করবো , তাহলে আমার অবস্থানটা অনেকখানি দুর্বল , খেলো এবং পরনির্ভরশীল হয়ে থাকলো । ঘটনাটির মূল সৌন্দর্য থেকে আমি অনেকটাই সরে গেছি ।

প্রশংসা বা স্বীকৃতি আসে, একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই । কেউ একটা খাবার রান্না করলেও তার মূল খেয়াল থাকে এই দিকে,যে যারা এই খাবারটা শরীরে গ্রহণ করবেন, তাদের যেন একটা ভালো অভিজ্ঞতা হয় । এই ভালো অভিজ্ঞতাটা দেবার দিকে তার ধ্যান থাকে বা  থাকবে বলে আমি আশা করি। সেই খাওয়া খেয়ে ভালো লাগায় আমার পাগল হবার দশা! শব্দই খুঁজে পাচ্ছি না , কি বললে ঠিক করে এই মানুষটার রান্নার প্রশংসাটা ঠিক মত করা যাবে! আসলে শব্দ খুবই গরীব মাধ্যম ! কতটুকুই বা বলা যায় শব্দে! কিন্তু এই যে আমার শব্দগুলো , এগুলো আমার ভালো লাগার প্রকাশমাত্র , এগুলোই কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা নয়! আমার অভিজ্ঞতা আমার নিজস্ব । যিনি রেঁধেছেন, তিনি আমার শব্দে নয় , আমার খাওয়া দেখেই বোধহয় বুঝবেন সবচেয়ে ভালো , তার কাজটা সফল হলো কিনা! আমি একটা ভালো অভিজ্ঞতা পেলাম কিনা! তার যত্নটা সেইখানে যে আমি যেন খেয়ে শরীরে প্রাণে মনে খুশী হই। কিন্তু তার ধ্যান যদি হয় এই , যে আমি কখন বলবো তাকে, “ তোমার উপরে কেউ নেই! You are simply the best”! , এই শোনার জন্য যদি সে অপেক্ষায় থাকে , তাহলে সে খুব গরীব হয়ে থাকলো । রান্নার সময়টাও যদি তার চিন্তার মূল জায়গাটাকে ঘিরে থাকে, কে তাকে কি কি বলবে, তাহলে সেটা নিতান্তই গরীবী! খুব গরীবী!এই গরীব চিন্তাগুলো তার রান্নার ভেতরেও মিশে যাবে বলেই বোধহয় , তার রান্নাতেও একটা গরীবী আসবে । খাওয়াটা জমবে না !

মানুষ যখন মরীয়া হয়ে চেষ্টা করে একটা প্রশংসা পেতে, তাকে এরকমই গরীব দেখায় । আমি দুঃখিত , এই কথার ভেতর দিয়ে আমি জানিনা হয়তো অনেক মানুষকে আক্রমণ করলাম কিনা! কিন্তু আক্রমণটা আমার উদ্দেশ্য নয় । এই প্রক্রিয়ার ভেতরে যে দারিদ্র্যকে আমি আবিস্কার করেছি , সেটাকে আর কেমন করে আরেকটু নম্র ভাষায় প্রকাশ করা যায় , আমি তা জানি না! কেউ কাউকে সুন্দর বললে, তাতে খুশী হওয়াতে দোষের কিছু নেই । কিন্তু কেউ কাউকে সুন্দর না বললে, তাই নিয়ে মন খারাপ করাটা একটা বোকা বোকা ক্ষতির ব্যাপার ।  জগতে অনেক ভালো ভালো দুঃখ আছে । এইসব মেকি দুঃখ তৈরী করার কারখানাতে বসে বসে নিজের সৌন্দর্যকে , নিজের চিন্তাকে , নিজের অস্তিত্বকে নষ্ট করাটার আমি বিপক্ষে । আপনি সুন্দর । জীবন সুন্দর । আকাশ সুন্দর । গাছ সুন্দর । নিজেকেও দেখুন । আর সব কিছুকেও দেখুন । জগতের যে সৌন্দর্যের হোলি খেলা চলছে, আপনি তারই অংশ। আপনার পক্ষে অসুন্দর হওয়াটা এখানে একপ্রকারের অসম্ভব । আপনি বিচ্ছিন্নভাবে একা একা চেষ্টা করলেও অসুন্দর হতে পারবেন না। তবে চেষ্টা করলে, এইসব ফালতু দুঃখ কষ্ট দিয়ে আপনি আপনার সৌন্দর্যকে কিছু সময়ের জন্য মলিন করতে পারবেন ।  আপনার সৌন্দর্য কোন লাইক বা কমেন্টের উপর নির্ভরশীল নয় । আপনার সৌন্দর্য  প্রকৃতির সিদ্ধান্ত ।  জগতে যে দিকেই তাকাবেন , শুধুই সুন্দর । বরং আপনার যা কিছুকে লোকে অসুন্দর বলতেও পারে, সেটা জগতের কিছু অপরিণত অসুন্দর চিন্তার বিজ্ঞাপনী প্রচারণার ফসল, এর সঙ্গে অনেক বানিজ্যিক ব্যাপার জড়িত !

একবার ভাবুন তো , সবাই যদি নিজেকে সুন্দর বলেই বিশ্বাস করে , তাহলে জগতে “আরো সুন্দর “ বোধ করার জন্য যতরকমের বিক্রি-বাটা চলছে, তাই দিয়ে কিছু লোকের রুটি-রুজিও তো হচ্ছে, সেসবের কি হবে! কিছু মানুষ একগুচ্ছ  ব্যবসা তৈরী করেছে , তাই প্রথমে একটা ভ্রান্ত প্রচারণা ছড়িয়েছে, যে আপনি অসুন্দর , এরপর তার ওষুধ নিয়ে প্রসাধনীর বাজার বসিয়েছে। আমি প্রসাধনীর বিরুদ্ধে নই। প্রসাধনীর ব্যবহার সুন্দর মানুষকেই অন্যরকম করে উপস্থাপন করে! তাতে কিছু আকর্ষণীয় চোখ ধাঁধাঁনো উপাদান থাকে ।  সেটা সুন্দর একটা সময় খাটানোর খেলা ! তার আলাদা করে আমি দোষ পাই না । তাই বলে প্রসাধনী “অসুন্দর”-কে সুন্দর করে না । এক সুন্দরকেই অন্যরকম সুন্দর করে। ব্যাপারটাকে এইভাবে দেখতে আমি রাজী আছি ।

 সারাক্ষণ নিজের সৌন্দর্য নিয়ে পড়ে থাকলে আপনি আমি খুব  ঠকে যাবো । আরো অনেক কিছু দেখার আছে । সুন্দরকে দেখতে পাওয়ার জন্য আগে সুন্দর হতে হয় । বুঝতে হয় যে আপনি সুন্দর । এইটুকুই জগতের প্রথম সুন্দর । বুঝতে পারা, যে আমি আসলে সুন্দর ! সেটুকু বুঝতে পারার পর , আর কোনদিন কারোর লাইক বা কমেন্টের প্রয়োজন পড়ার কথা নয় । সেইসব লাইক বা কমেন্ট হতে পারে সাধারণ ভাগাভাগির ব্যাপার । ছোটখাটো হাসিতামাশার আর দুষ্টুমীর ব্যাপার । সেখানে খুব বেশী গুরুত্ব আরোপিত হবার কথা নয় । সেই জায়গাটা নিয়ে কথা তুলছি ।  এর চেয়ে বেশী গুরুত্ব এই জায়গাটাকে দেবার কথা নয় । আমি তেমন করেই ভাবছি ।

একটা বিষয় হলো কাউকে খেয়াল করার ব্যাপার । To be noticed! আপনি একটা  মানুষের জন্য সাজলেন । সে মানুষটা খেয়াল পর্যন্ত করলো না, আপনি তার জন্য সেজেছেন , তাহলে সে কতটাই না আপনার সাথে অ-সংযুক্ত! এরকম করে সবার জন্য সাজা যায়?আশা করা যায় কি , যে  সে খেয়াল করবে?  না , এরকম করে জগতের সকলের জন্য সেজে থেকে আশা করা যায় না সকলেই খেয়াল করবে! সেজে থাকা যায় প্রথমতঃ নিজের জন্য । নিজেই নিজেকে খেয়াল করাই যথেষ্ঠ । নিজের চোখে নিজেকে আয়নাতে সাজিয়ে সুন্দর লাগবার পরে যে ভালো বোধ হয় , সেটাই জগতের সবচেয়ে জরুরী লাইক ! নিজের কমেন্টটাই সবচেয়ে বড় compliment! আর তারপরেও মানুষের কিছু বিশেষ মানুষ থাকে । তাদের জন্যেও ভালোবেসে মানুষ সাজে! পুরুষ নারী নির্বিশেষে! তাতে অপরাধ হয় না কোন! সেটা সেই মানুষগুলোর নিজস্ব ব্যাপার ।  এবং সেই বিশেষ মানুষ আপনাকে তার ভালো লাগার কথা প্রকাশ করলে আপনার ভালো লাগতেও পারে! সেটা একটা ব্যাপার! লাগাটাই তো স্বাভাবিক ।

একটা বিশেষ মানুষের সঙ্গে একটা বিশেষ ব্যাপার!সেটা একটা ব্যক্তিগত লেনদেন ।  সেটা কি পাঁচ হাজার মানুষ বললেও আপনার একইরকম অনুভূতি হবে? সেটা কি কোনদিন সম্ভব? কিভাবে সম্ভব ? আপনি মানুষ একজন! আপনার মুখ একটা! আপনার মন একটা! পাঁচ হাজার বা পাঁচশো বা পঞ্চাশজন মানুষের প্রশংসা না পেলে আপনি পূর্ণ বোধ করেন না, এটা কিভাবে কোন যুক্তিতে ঘটে গেল আপনার জীবনে?  আপনি সাজলেন আপনার প্রাণের মানুষের জন্য । সে খেয়ালই করলো না। সেটাতে মন খারাপ হতে পারে । সেটা মন খারাপের অপচয় নয় । সে আপনার মানুষ । আপনি আশা করেন সে আপনাকে দেখবে। খেয়াল করবে । সে আপনার জন্য সাজে। আপনি খেয়াল করেন । তাকে তাই নিয়ে দুটো কথা বলেন । আপনি তার জন্য সাজেন। এবং আপনার নিজের জন্যেও সাজেন । তাই নিয়ে সে দুটো কথা বলে। সেও তার জন্য সাজে । আর আপনার কথা ভেবেও সাজতে পারে । এগুলোই তো মানুষে মানুষে ভালোবাসা-বাসি! তাই না ? সে আপনাকে দেখা না দেখায় আপনার কিছু না কিছু আসে যায় । সে আপনার জীবনের কোন সত্য মানুষ!সেটা একটা যৌক্তিক ব্যাপার এবং যৌক্তিক অভিমান! সেখানে যদি লজ্জ্বার মাথা খেয়ে দু’টো প্রশংসার বাণী আপনি তার থেকে শুনতেও চান, সেটা দুই প্রাণের ভালোবাসার সীমানার ভেতরের একটা সুন্দর দাবী, একটা প্রেমের বিনিময় , এর মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে! এটা আর কোথাও চান না , শুধু তার কাছেই চান! সেও তাই চায়! এটা আমি পরিস্কার করেই বুঝতে পারি ।

কিন্তু আপনি সাজলেন । সেটা ভাগ করে নিলেন জগতের সঙ্গে। সেটা আপনার  নিজস্ব খেয়াল । আপনার ছবি আঁকার কথা বলার ভাব প্রকাশের  দেয়ালে আপনি যা খুশী তাই ভাগ করে নিতেই পারেন , তাতেও কোনই সমস্যা নেই । কিন্তু সেখানে কেউ খেয়াল করলো না আপনাকে!  তেমন করে লাইক দিলো না। “অসাধারণ”! “মারাত্মক”! “আপনার তুলনা শুধুই আপনি”! “You are second to none”! এসব লিখে রেখে চলে গেল না কেউ! আপনার মুখচ্ছবির দেয়াল শুকনো পড়ে রইলো! তাতে আপনি মন খারাপ করলেন? মুষড়ে পড়লেন! পরেরবার আরো হিংস্র মনোভাব নিয়ে সাজতে বসে গেলেন , সেই পাঁচজনের লাইক বা কমেন্ট শোনার জন্য, যাদের সঙ্গে আপনার গত পাঁচ বছরে কোনদিন দেখাও হয়নি! হায় আল্লাহ! এর মানে কি?এর মানে আসলে কি , তাই নিয়ে কি আমরা ভেবেছি? ভাবি? কার জন্য মন খারাপ করছেন ?এসব নিয়ে ভাবা খুব দরকার। সেই অনুরোধ করছি । ভাবুন । ভাবনাকে স্বচ্ছ করুন । নিজেকে বুঝুন । এই সময়কে বুঝুন । আপনার শরীরের বিশ্রামের জন্য দরকার যেই ঘুমটা , সেটা যেমন আপনাকেই ঘুমাতে হবে, আর কেউ ঘুমিয়ে দিতে সেটা পারবে না, এই ভাবনাগুলোও আসলে আপনাকেই ভাবতে হবে ।

আমি খুব ভাবি । বেঁচে থাকার আর ভালো থাকার প্রয়োজনে! নিজেরটা নিজে ভাবি। কত লোকে কত জ্ঞ্যানের কথা বলেই তো গ্যাছে। ওতে আমার হয় না । পরের জিভে ঝাল খেয়ে আমার পোষায় না । আমার নিজের মাথার ভেতরে আমাকে ভাবতে হবে ভাবনাগুলো ।  ভাবাভাবি আমার বিলাসিতা । ভাবনার স্বচ্ছতা আমার উচ্চাভিলাষ । যাক এবার আসি চটুল কথায় । কাউকে আঘাত করতে চাই না । কোন কিছুকেই বাতিল করার আগ্রহ নেই । বিষয়টা নিয়ে ভাবতে বসে এইসব মাথায় খেলে গেল আরো অনেকের মতই আমারো । আমি সেলফির বিরুদ্ধে নই । আমি নিজে যথেষ্টই পাঁকা সেলফিবাজ ।  তবে সেইসব ছবি দু একটা মানুষের জন্য ।  একটা হাসির কথা বলি।

আমার সেলফিবাজির গল্প!  নতুন নতুন সেলফি তোলা শিখেছি তখন। আমি মাঝেমধ্যে বাজারে যাই এমনি। মানুষগুলোর সঙ্গে মুহুর্ত বাড়াবার জন্য । যার সাথে যাচ্ছি , তার কিছু কেনার দরকার আছে । আমার হয়তো নেই । এমনিই যাই । তো সেদিনের ঘটনা বলি । নতুন নতুন সেলফি তুলতে শিখেছি । খুব মজা লাগছে । কিন্তু প্র্যাক্টিস করার জায়গা নেই । সেলফিও একটা সাধনা স্বাপেক্ষ ব্যাপার । শুধু টেপাটেপি করলেই ভালো সেলফি তোলা যায় না ।  এবার বাজারে গেলাম গাড়িতে । তারপর পার্কিং লটে বসে আছি গাড়িতে । ওরা সব বাজারে চলে গেল । আমি বললাম, “আমার যেতে মন চাইছে না । যাবো না! গাড়িতে থাকি”! থেকে গেলাম । আসল কথা হলো , সেলফি -প্র্যাক্টিস করতে চাই ! ওদের সামনে করতে লজ্জ্বা পাচ্ছি । এবার ওরা চলে যাওয়ার পরে , আমি সেই সুযোগে গোপনে অনেকগুলো ছবি তুললাম নিজের । প্রচুর অভিনয় করলাম । উদাস ভঙ্গীতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম , আর বাম হাতে ক্যামেরা সেট করে ক্লিক মারলাম । তখনই আমি প্রথম আবিস্কার করি , আমার বাম হাতের চেয়ে ডান হাতের কাজই ভালো । কালো চশমা পড়ে তুললাম । আবার কালো চশমা খুলেও তুললাম । সিনেমা থেকে শেখা নানান পোজ চেষ্টা করলাম ।  এগুলো করে সময়টা বেশ আনন্দে কাটলো । প্রচুর হাসাহাসি হলো । সবগুলো ছবিই সুন্দর । তারপর সেসব ছবি পাঠানোর যে মানুষ , শুধু তাকেই পাঠিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম , সে কখন বলবে একটা কোন সাংঘাতিক কথা! আমি এরকম সেলফিবাজি মাঝেমধ্যেই করি । সেলফি জিনিষটা খারাপ নয় । তা অনেক আনন্দের মুহুর্তের জন্ম দিতে পারে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে । যতক্ষণ তা আনন্দের উদ্দীপক, আমি ততক্ষণ তার সাথে আছি । যখন তা দুঃখের কারণ, তখন আমি বুঝতে পারি , আসল দুঃখের অভাব হলেই মানুষ এরকম দুঃখ তৈরী করে নিয়ে দুঃখী হবার চেষ্টা করতে পারে !

এবার আসি আমার রাস্তার জীবনে । সেলফির সঙ্গে আমার রাজনৈতিক একটা সম্পর্ক আছে । যখন হাঁটতে যাই , বা কোথাও যাই হেঁটে হেঁটে , পথে অনেকের সাথে দেখা হয় । রাজনৈতিক সুবাদে একটা যোগাযোগ ঘটেছে এক তরফা । অনেক মানুষকেই আমি চিনি না , কিন্তু তারা আমাকে চেনেন , আমি রাজনীতি করি বলেই । এবার তারা এগিয়ে এসে ছবি তুলতে চান । অনেকেই প্রথমে কাউকে বলেন ছবিটা তুলে দিতে । তারপরে সেটা হয়ে গেলে , বলেন , “একটা সেলফি নেবো”! এটা দ্বিতীয় ছবি । তারপর সেটাতে তাকে ভালো দেখা না গেলে, তারা মাঝেমধ্যে এটাও বলেন , “এভাবে না প্লীজ! আরেকটা প্লীজ”! আমি হাসি । কোথাও সময় মত পৌঁছাবার প্রয়োজন না থাকলে দাঁড়াই । তারা ছবি তুলে চলে যান । আমি ঘরের বাইরে বের হলে , এরকম অনেক ছবি তোলাতুলি ঘটে যায় । এটা আমার খারাপ লাগে না । কিন্তু এটা না ঘটলেও আমার খারাপ লাগে না । এটার জন্য আমার কোন অপেক্ষা নেই । এটার বিরুদ্ধে আমার কোন আয়োজনও নেই।   এটার মানে হলো , আমার করা কোনো কল্যাণকর কাজ বা অন্য কিছু এই মানুষগুলোর প্রাণের কোথাও পৌঁছেছে । আর এটা যখন হয় না , তখন আমার মাথায় এমন কোন মরীয়া চিন্তা আসে না, যে “ সব জায়গায় আমার ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট গুলোকে এমনভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে যেন সেলফির সংখ্যা গড়পরতায় আরো অনেক বেড়ে যায়”! 

এই সব মানুষদের মধ্যে কেউ কেউ সেই তোলা ছবি তাদের ওয়ালে তুলে দেন। সেটা আমার জানা হয় না। আমার ফেসবুক বন্ধু-তালিকায় অনেক মানুষ । তাদের মধ্যে  ২০/২৫ জন মত মানুষকে আমি অল্প বিস্তর চিনি । বেশীর ভাগই রাজনৈতিক সূত্রে চেনা । এদের কারোর কারোর সাথে পথে দেখা হলে তারা ছবি তোলেন । সেটা আমার দেয়ালে টাঙ্গিয়ে দেন । তাদের ভালো লাগার কথা প্রকাশ করেন । প্রশংসা করেন । আমি এইসব কথার কিছু কিছু “ট্যাগ” গ্রহণ করি । তার ভালো লাগার প্রকাশকে বুঝেশুনে , আমার লেখালেখির মাধ্যমে প্রচারণার জন্য ব্যবহার করি । এই কাজটা কোন বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানকে দিলে , তারা বানিয়ে বানিয়ে একটুও অনুভব না করে আমার নামে কিছু ভালো কথা বলতো , এবং এই প্রশংসার জন্য তারা আমার কাছে পয়সা নিতো । আমি পয়সা খরচ করে প্রশংসা কিনে, আমার প্রচারণা করতে চাই না । সেটাতে মন সায় দেয় না । কিছু পথের দেখা মানুষ তাদের প্রাণ থেকে আসা কিছু ভালো লাগার কথা বলেন । আমি মনে করি , আমার দিক থেকে এইটুকুই সবচেয়ে সুস্থ এবং Organic প্রচারণা আমার লেখালেখির । এগুলো কথা হিসেবে যাই হোক, এই লোকটাকে আমি নিজে চিনে । তার প্রাণ থেকে কথাটা উঠে এসেছে। তার কথাটা দুর্বল হতে পারে। কিন্তু তার অনুভূতি আমার কাছে সত্য । এইটুকুই আমার লেখার অর্জন একজন ভক্তের থেকে । যে ব্যক্তি নিজের থেকে এগিয়ে এসে ভেবে চিনতে আমার সঙ্গে ছবি তোলেন , এবং আমার কোন লেখা  নিয়ে তার ভালো লাগার কথা প্রকাশ করেন , আমি তার থেকে কিছু কিছু মন্তব্য রেখে দিই । কিন্তু কাজটা আমি ভেবেচিন্তেই করি । নিঃস্বার্থভাবে করি না। আমার স্বার্থটাই হলো রাজনীতি ও লেখালেখির  কাজের জন্য একটা কমিউনিটি তৈরী করা । সেটুকু হয়ে আছে । এর বেশী দরকার নেই । এর বেশী সংযুক্তি আমার জীবনের শান্তি নষ্ট করে দেবে । এটুকু থাক। তবে এটুকু এই প্রসঙ্গে জানানো দরকার , কোন ব্যক্তি ছবি তোলার পরে আমি অপেক্ষা করি না, কবে তিনি আমার নামে দু’টো ভালো কথা বলবেন, এবং তাকে আমি প্রচারণার কাজে ব্যবহার করতে পারবো । বিষয়টা স্বাভাবিক একটা সহজাত প্রক্রিয়াতে যখন ঘটে , তখন আমি সেটাতে সাড়া দিই । এটাই আমার প্রচারণার ঢং ।

এই রাস্তাঘাটের সেলফি প্রক্রিয়াতে আমি অনেক সুন্দর সুন্দর গল্প পাই । কেউ কেউ বলেন –“ একটা স্মৃতি রাখতে চাই। দেবেন?” খুব মিষ্টি সেই কথা । তিনি বিব্রত , আমাকে তার জ্বালাতে হচ্ছে বলে। কিন্তু তার সেই নম্র চাওয়া আমার ভালো লাগে । সব মিলিয়ে আমি রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করতে খুব ভালোবাসি । ঢাকার রাস্তা মোটেও গর্ব করার মত কিছু নয় । এত বাজে দেখতে রাস্তা সারা দুনিয়ায়তে খুব কম আছে । কিন্তু এই রাস্তার সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক হয়ে গ্যাছে । রাস্তায় নামলেই মনে হয় রাজনৈতিক নেতা না হয় অতি সাধারণ আমার পরিচিত মানুষের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল । সব রাস্তায় আমার চেনা । আমি হাঁটতে খুব ভালোবাসি । 

সব মিলিয়ে একটা ভারসাম্য থাকা ভালো । আমার কোন শক্ত নীতি নেই । যে দিনটা আসে, যেই মনটা থাকে, যেই মুহুর্তটা আসে , সেই মুহুর্তটাই আমাকে নির্দেশনা দেয়, সেই দিনটা আমি কি করবো । আগের থেকে ঠিক করে রেখে বের হই না! তবে আমি এইটুকু মূল জ্ঞ্যান নিয়ে চলি । সেটা হলো , আমার ব্যক্তিগত সময় থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে আমি পৃথিবীর জন্য কিছু করি। নিজের খুশী থেকে অন্যের উপকার করি । তারপর ছবি তুলি । এটা সেটা করি । আমার হাঁটাহাঁটি, আমার আকাশ দেখা , এগুলোর গুরুত্ব আমার কাছে অনেক বেশী , মরীয়া হয়ে প্রচারিত হবার চেষ্টার চেয়ে । অনেক বেশী মানুষের কাছে প্রিয় আর চেনা হবার চেয়ে , জীবনকে অনেক বেশী কাছের থেকে চেনা, পাওয়ার গুরুত্ব আমার কাছে বরাবরই অনেক বেশী । এই জায়গাটাকে আরেকটু ভেঙ্গে বলবো । আমার ২৪ ঘন্টার সময়ের একটা দিনে আমি যা কিছু চেষ্টা করি , তার মধ্যে সিংহভাগ থাকে , ভালো থাকবার চেষ্টা ।  সেটা আমার নিজের ভালো থাকা। সেটা আমার নিজের জন্য কাজ । সেখানে আমার কোন নাম নেই । আমি প্রকৃতির সন্তান । লেখালেখির প্রবণতা প্রকৃতির উপহার আমার অস্তিত্বে। আমি তাকে উপভোগ করি প্রাণ ঢেলে , অকাতরে , অকৃপণভাবে । সেখানে স্মরণ বলে কেউ নেই । সেই আমি শুধু একটা জীবন-প্রেমিক প্রাণ! সেটা আমার বেঁচে থাকার একটা বড় জায়গা । কিন্তু  আমি যখন সেই লেখালেখিটাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য চেষ্টা করি, সেই চেষ্টাটা হলো আমার “ মহত্বের ”-পরিচয়ের কাজ ।

 
 
 
  • জীবনবোধের গল্প
  • জীবনবোধের গল্প - মোহাম্মদ শেখ কামালউদ্দিন স্মরণ
  • মোহাম্মদ শেখ কামালউদ্দিন স্মরণ
  • IT Amadersomaj