সময় সংবাদ রিপোর্টঃ বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় কঠোর অবস্থানে থাকবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। রাজধানী ঢাকা নিজেদের কবজায় রাখতে কোনোভাবেই বিএনপিকে ছাড় দেবে না ক্ষমতাসীনরা। এক দিকে সরকারিভাবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তৎপর থাকবে; অন্য দিকে বিএনপির মহাসমাবেশের বিপরীতে পাল্টা সমাবেশের মাধ্যমে পুরো শক্তি নিয়ে রাজপথে সক্রিয় থাকবে নেতাকর্মীরা। সরকারবিরোধীরা সরকার পতনের জন্য কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে পাল্টা প্রতিহত করার জন্যও দলীয়ভাবে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে বলে সরকারি দলের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিএনপিকে অনুসরণ করে ২৭ জুলাইয়ের নির্ধারিত সমাবেশ এক দিন পিছিয়ে ২৮ জুলাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগও। আগামীকাল শুক্রবার বেলা ৩টায় আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্যমেলা মাঠে সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীনরা। সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, গাজীপুর মহানগর, নারায়ণগঞ্জ মহানগর এবং টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা জেলা ও ময়মনসিংহ জেলার নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে বড় ধরনের সমাগম ঘটানোর জন্য দফায় দফায় বৈঠক ও মতবিনিময় করছেন কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ। মতবিনিময় সভা করেও কেন্দ্রের তরফ থেকে নেতাকর্মীদের সমাবেশকেন্দ্রিক বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গতকাল বলেন, বিএনপি সহিংসতা, হানাহানি, ধ্বংসাত্মক মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। তারা শুধু ক্ষমতা চায়, ক্ষমতা দখলের রাজনীতি করে বিএনপি। জনগণের কথা ভাবে না, জনগণকে নিয়ে তাদের কোনো রাজনীতিও নাই, জনগণের প্রতি আস্থাও তাদের নাই। এ জন্য নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতি পরিহার করে তারা আবারো ধ্বংসাত্মক রাজনীতির পথে হাঁটছে। তিনি বলেন, বিএনপির ঢাকা অচলের দিবাস্বপ্ন কোনো দিন পূরণ হবে না। তারা যদি আবারো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে তাহলে আমি মনে করি, এটি আইন শৃঙ্খলাবাহিনী দেখবে। আমরাও সতর্ক অবস্থানে থাকবো এবং জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের জনগণের জানমাল রক্ষায় তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করব।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, ঢাকা যার দখলে থাকবে পুরো দেশ তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। বিএনপির ঢাকা দখলের হুমকি এত দিন শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে দেখলেও নির্বাচনকেন্দ্রিক বিদেশী তৎপরতার পর থেকেই আওয়ামী লীগ একটু ভিন্নভাবে দেখছে। অতীতে বিএনপি বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলেও সাম্প্রতিক রাজধানীতে বড় বড় কয়েকটি সমাবেশ করে দেখিয়েছে। বিশেষ করে সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা করার পরই তারা ঢাকা দখলের হুমকিও দিয়ে যাচ্ছে। তাই বিএনপির সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন মোকাবেলা করার জন্য ঢাকাকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। সে জন্য বিএনপির মহাসমাবেশের বিপরীতে আজ সমাবেশ করার কথা থাকলেও বিএনপির সমাবেশ পিছিয়ে দেয়ায় যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ছাত্রলীগের উদ্যোগে যৌথভাবে ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ শীর্ষক শিরোনামে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশও পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরেই বিএনপি সরকার পতন আন্দোলনের কথা বলে আসছে। এখন তারা সরকার পতনের এক দফা দিয়েছে। দাবি আদায়ে ঢাকায় একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার পরিকল্পনা বিএনপির রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার দেয়া তথ্যের মাধ্যমে সরকার সেটি জানতে পেরেছে। সে জন্য আমরা সরকারি দল হিসেবে সতর্ক আছি। অন্তত ঢাকায় বিএনপিকে বড় ধরনের কোনো আন্দোলন আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই চাঙ্গা হতে দেবে না। এর আগেও বিএনপির রাজপথ দখলের ঘোষণা দেয়ার পরই রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশ করে শক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজপথে বড় বড় সমাবেশ করেও বিএনপিকে একটি বার্তা দেয়া হয়েছে তা হলো আওয়ামী লীগ রাজপথ ছাড়েনি। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় নেতাকর্মীরা সক্রিয়ভাবে রাজপথ দখলে রাখবে। তবে আওয়ামী লীগ চায়, বিএনপি তাদের দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করুক। তবে সেই আন্দোলন শুধু বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে সীমাবদ্ধ থাকুক। নয়াপল্টনে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করলে কেউ বাধা দেবে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নমনীয় নীতি দেখাবে। তাদের আন্দোলনের গতিধারা অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়–ক সেটি চায় না আওয়ামী লীগ।
এ প্রসঙ্গে প্রবীণ রাজনীতিক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, দেখতে হবে সমাবেশের উপযোগিতা আছে কি না। বিএনপি এর আগেও আন্দোলন-সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। বিএনপি সরকার পতনের ডাক দেবে আওয়ামী লীগ তো সরকারি দল হিসেবে ঘরে বসে থাকতে পারে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সঙ্ঘাত চায় না। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। তবে কেউ যদি রাজপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় তার জবাব দেয়া হবে, প্রতিহত করা হবে। এ জন্য শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবে।