দুই উপজেলার ৩০ হাজার মানুষের ভরসা বাঁশের সাঁকো!

লেখক: Amadersomaj
প্রকাশ: ১১ মাস আগে


এইচ এম রাসেল : বরগুনার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের চড়কগাছিয়া ও তালতলী উপজেলার পচাঁকোড়ালিয়া ইউনিয়নের কলারং গ্রামের মধ্যখানে প্রবাহমান পচাঁকোড়ালিয়া নদী। দুই উপজেলার দুই ইউনিয়নের অন্তত ৩০ হাজার মানুষের মেল বন্ধন এ বাঁশের সাকো। ওই সাকো দিয়ে ২১ গ্রামের মানুষের পারাপার হয়। নড়বরে সাঁকো দিয়ে গত ৪০ বছর ধরে দুই ইউনিয়নের মানুষ চলাচল করছে। কিন্তু যুগের পর যুগ চলে গেলেও সাকোটির কোন পরিবর্তন হয়নি। এতে ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে ২১ গ্রামের মানুষ। দুই ইউনিয়নের মানুষের মেল বন্ধন আরো শক্ত করতে দ্রæত ওই বাঁশের সাকোটি সেতুতে রুপান্তিত করার দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে ,আমতলী ও তালতলী দুই উপজেলার মধ্যবর্তী প্রবাহমান পঁচাকোড়ালিয়া নদী। গত ৪০ বছর আগে এ নদীতে খেয়া নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর স্থানীয়দের উদ্যোগে ওই নদীর ওপর প্রায় তিন শত মিটার বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকেই স্থানীয় জনতা প্রতিবছরই সাঁকোটি মেরামত করে পারাপারের ব্যবস্থা করে। আড়পাঙ্গাশিয়া, চান্দখালী, কলারং ও ঘোপখালীসহ ওই এলাকার ২১ গ্রামের মানুষ উপজেলা সদরসহ জেলার অন্যান্য স্থানের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ওই সাকো। ওই নদীর দুই পাড়ে রয়েছে কয়েকটি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর সহস্রাধিক শিক্ষার্থী হ অন্তত ৩০ হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই সাঁকো দিয়ে পারাপার হয়। এছাড়া দুই ইউনিয়নের উৎপাদিত খাদ্যশস্য, কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বাজারজাতকরণ ও রোগীর জরুরী চিকিৎসার জন্য ওই নড়বড়ে সাঁকোর ওপর দিয়েই যেতে হয় । এতে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয় এলাকার বাসিন্দাদের। সেতু না থাকায় শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে ওই অঞ্চলের জনগোষ্ঠি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পঁচাকোড়ালিয়া খালের ওপর সেতু নির্মিত হলে পাল্টে যাবে দুই পাড়ের অন্তত ৩০ হাজার মানুষের জীবনযাত্রার মান। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যুগের পর যুগ চলে গেলেও খালের ওপর সেতু হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন দেখেও না দেখার ভান করছে। এ এলাকার মানুষ তাদের কাছে যেন ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দা। জীবন মান উন্নয়ন, ব্যবসা বানিজ্য, শিক্ষা প্রসার ও কৃষিপন্য বাজারজাত করনে দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবী জানান তারা।

শুক্রবার সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে , তালতলী উপজেলার পচাঁকোড়ালিয়া ইউনিয়নের কলারং থেকে আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের চরকগাছিয়া গ্রামসহ ২১ গ্রামের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এ সাঁকো। গ্রামগুলোর সহস্রাধিক শিক্ষার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাকো পার হয়ে পূর্ব চড়কগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চড়কগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাহলান বাড়ি কওমি মাদ্রাসা, ড. মো. শহিদুল ইসলাম কলেজ, কলারং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পচাকোড়ালিয়া বাবু আলী দাখিল মাদ্রাসায় যেতে হয় ।

কলারং গ্রামের এনজিও কর্মী শহিদুল ইসলাম মাতুব্বর বলেন, একটি সেতুর অভাবে কৃষি জমি থেকে উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারজাত করতে খুব সমস্যা হয়। ফলে বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ খরচ দিয়ে বিকল্প রাস্তায় কৃষি পণ্য নিতে হয় । এতে আমরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তিনি আরো বলেন, যুগের পর যুগ চলে গেলের কেউ এখানে সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নেয়নি। তাই সেতু নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

চরকগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলিফ ও রায়হান বলেন, বিদ্যালয় যেতে বাঁশের সাকোই আমাদের একমাত্র ভরসা। শিক্ষা প্রসারে দ্রুত বাঁশের সাকোটি সেতুতে রুপান্তরের দাবী জানান তারা।

পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, ওই স্থানে সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) সুপারিশ করা হবে।

আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেলী পারভীন মালা বলেন, সেতু নির্মানের জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষের নিকট চিঠি দেয়া হয়েছে। দ্রুত সেতু নির্মাণের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

তালতলী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ইমতিয়াজ হোসাইন রাসেল বলেন, একশ মিটারের চেয়ে বড় আকারের সেতু নির্মাণের জন্য আলাদা প্রকল্প প্রয়োজন। এই খালের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব তৈরি করে সফট কপি ঢাকায় পাঠানো হবে। সেখান থেকে প্রক্রিয়া শেষে অনুমোদন হলে কার্যক্রম শুরু করা হবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, জনসাধারণের ভোগান্তি লাঘবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে সেতু নির্মানের ব্যবস্থা করা হবে।

IT Amadersomaj