দ্বিতীয় দফায় বেড়েছে তিস্তার পানি, ছুটি বাতিল করে কন্ট্রোল রুম চালু করেছে পাউবো

লেখক: Amadersomaj
প্রকাশ: ১২ মাস আগে


মোঃ আনোয়ার হোসেন, ডিমলা, নীলফামারী : উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উজানে ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানি আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পায়। গতকাল এই পানি প্রবাহ ছিলো সর্বোচ্চ ফলে তিস্তায় পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত। রাত দশটায় বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তাপাড়ে প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে নামতে শুরু করেছে পানি। গেল মধ্য রাত থেকে আবারো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা-তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের অনেক বসতবাড়িতে এরই মধ্যে পানি উঠে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এছাড়াও নীলফামারীসহ তিস্তা ঘেঁষা উত্তরের ৫ জেলায় কর্মরত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে কন্ট্রোল রুম চালু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

আজ বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) ভোর পাঁচটার দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহের উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ মিটার ২৫ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা ব্যারাজের সবকটি জল কপাট খুলে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এছাড়াও পাউবোর ভিন্ন ভিন্ন দুটি আদেশে বলা হয়েছে, বন্যা মনিটরিং ও বন্যাকালীন জরুরি যোগাযোগের জন্য পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় কর্মরত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে একটি কন্ট্রোল রুম (০১৭৮৭৬৯৪৭৮৮ ও ০১৫৫২৩৫৩৪৩৩) খোলা হয়েছে। এসব নাম্বারে ২৪ঘন্টা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যেকোনো জরুরি তথ্যের জন্য কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

এ দিকে তিস্তা তীরবর্তী মানুষজন ঘরবাড়িসহ গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বিদ্যালয়ে ও আশ্রয়কেন্দ্রে। ভারতীয় ঢলে তিস্তার পানি আকস্মিকভাবে বেড়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি দ্রুত বাড়ায় রংপুর অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আবারও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

ঝাড়সিংহেশ্বর এলাকার বদিউজ্জামান বলেন, দুপুর থেকে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেলেও রাত সাড়ে আটটার দিকে কমতে শুরু করে। কিন্তু মধ্য রাতে আবারো বেড়েছে পানি।

কিসামত ছাতনাই এলাকার আলতাফ হোসেন বলেন, তিস্তায় পানি বৃদ্ধিতে কেটে রাখা আগাম জাতের আমন ধান তলিয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে রবি শস্য উৎপাদন খানিকটা হোঁচট খেলাম।

গতকাল বুধবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। এর আগে বিকেল ৪টায় তিস্তার পানি এই পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকেল ৫টায় তা বেড়ে ১০ সেন্টিমিটার ও সন্ধ্যা ৬টায় ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, বন্যা সতর্কতায় তিস্তা এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। বিভিন্ন মসজিদের মাইকে প্রচারণা চলছে। বন্যা কবলিত দুর্গত এলাকা পরিদর্শনও করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো ধরণের ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ পাওয়া যায়।

নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সৃষ্ঠ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৩০ মেট্রিক টন চাল ও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও প্রয়োজনীয় ত্রাণ মজুদ আছে।

IT Amadersomaj