সময় সংবাদ রিপোর্টঃ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট। তখন নগরীর বন্দর থানার দাম্মাম ফিলিং স্টেশনসংলগ্ন (রশিদ বিল্ডিংয়ের রিপরীতে) ট্রাক ডিপোটি অন্ধকারে ঢাকা। এর মধ্যেই ডিপোতে প্রবেশ করে চালবোঝাই একটি ট্রাক, নম্বর চট্ট-মেট্রো-ট ১১-৯২৬১। ট্রাকটি ডিপোতে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে ৪-৫ জন লোক ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা সিলগালা ভেঙে রশি খুলে চালের বস্তা নামাতে শুরু করেন। কেউ সরকারি বস্তা পালটে অন্য বস্তায় চাল ভরেন। এরপর বস্তা পরিবর্তন করা চাল তোলা হয় রিকশায়।
জানা যায়, দেওয়ানহাট সেন্ট্রাল সাপ্লাই ডিপো (সিএসডি) থেকে বের হয়ে ট্রাকটি এ ডিপোতে আসে। এটি সরকারি চাল নিয়ে রাঙামাটি যাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে না গিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর এলাকার ট্রাক ডিপোতে চাল খালাস শুরু করে। বিষয়টি স্থানীয় লোকজন জানতে পেরে তারা পাহারা বসায়।
স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে ট্রাক ডিপোতে সরকারি চাল চুরি হচ্ছিল। প্রথমে স্থানীয় লোকজন বুঝতে না পারলেও পরে তারা বুঝতে পারেন সরকারি চাল বিভিন্ন গুদামে নেওয়ার সময় এভাবেই চাল চুরি করে চক্রটি। প্রাপকের কাছে চালের ট্রাক পৌঁছলে পরিমাপ করলে দেখা যায় কয়েক বস্তা চাল কম বা কয়েকশ কেজি কম। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই ট্রাক ডিপো থেকে চালের বস্তা সরিয়ে ফেলা হচ্ছিল।
ঘটনাস্থলের বর্ণনা : ট্রাক ডিপোতে অবস্থান নিয়ে দেখা যায়, সিএসডি থেকে বের হওয়া সরকারি চালবোঝাই ট্রাক ডিপোতে প্রবেশ করছে। সবকটি ট্রাক সিএসডি থেকে সিলগালা করা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডিপোতে প্রবেশ করে প্রথম ট্রাক চট্ট-মেট্রো-ট ১১-৯২৬১। এর তিন মিনিট পর প্রবেশ করে চট্ট-মেট্রো-ট ১১-৭৫৯৬ নম্বরের ট্রাকটি। এভাবে সরকারি চাল বোঝাই ৫-৬টি ট্রাক একে একে প্রবেশ করল অন্ধকার ভেদ করে। এরপর ট্রাকগুলো থেকে চাল নামিয়ে সরকারি বস্তা পরিবর্তন করে রিকশায় তোলার কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। রিকশায় তোলার সময় কিসের চাল জিজ্ঞাস করলে ভড়কে যান মাঈনুদ্দিন পরিচয় দেওয়া এক ট্রাক শ্রমিক। আশপাশের লোকজন ও সাংবাদিকরা চাল পাচারের ছবি তুলেছে তা বুঝতে পেরে সড়কে কয়েক বস্তা চাল রেখেই ট্রাক নিয়ে সটকে পড়েন চালক। সিএসডি থেকে খবর নিয়ে জানা যায়, পরিবহণ ঠিকাদার ‘মেসার্স নূর ট্রেড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট’ নামের প্রতিষ্ঠানের ট্রাক এগুলো। দেওয়ানহাট সিএসডি থেকে বের হয়ে রাঙামাটি জেলায় যাওয়ার কথা ছিল এসব ট্রাকের। রাঙামাটি যাওয়ার পথে এই ডিপোতে ট্রাক থামিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চাল চুরি করে আসছে একটি চক্র।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ট্রাক ডিপোতে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চালের ট্রাক থেকে চাল চুরির ঘটনা ঘটছিল। ফলে মঙ্গলবার পাহারা বসিয়ে ছিলাম। প্রতিদিনকার মতো মঙ্গলবারও সরকারি চাল চুরি করেছে।
খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, সিএসডি থেকে প্রোগ্রাম নিয়ে চালবাহী (চলাচলের সূচিকে খাদ্য বিভাগে প্রোগ্রাম বলা হয়) স্থানীয় খাদ্য গুদামে (এলএসডি) নিয়ে গেলে ৩-৪ বস্তা বা ২০০ থেকে ৩০০ কেজি চাল কম পড়ে। কিন্তু সিএসডি থেকে ১৫ টন করে দেওয়া হয় প্রতি ট্রাকে। স্কেলের পরিমাণকৃত প্রিন্টেড কপিও দেওয়া হয়। কিন্তু গন্তব্যে যাওয়ার আগেই ট্রাক শ্রমিকসহ একটি চক্র পথেই চালের একাংশ চুরি করে। কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িতে প্রেরক কেন্দ্র থেকে যে পরিমাণ চাল দেওয়া হয়, প্রাপক কেন্দ্রে তার চেয়ে কম পাওয়া গেলে সরকারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।
জানতে চাইলে ‘মেসার্স নূর ট্রেড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট’-এর মালিক মাহবুবর রহমান বলেন, আমি দীর্ঘ ৭-৮ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে চাল পরিবহণ করছি। কোনো দুর্নাম নেই। এসবে আমি জড়িত নই। গাড়ির চালকরা জড়িত থাকতে পারে। দেওয়ানহাট সেন্ট্রাল সাপ্লাই ডিপো (সিএসডি) ব্যবস্থাপক হাসান জাহাঙ্গীর বলেন, সিএসডি থেকে সরকারের নির্দেশনায় বরাবর চাল দেওয়া হয়। স্কেলে পরিমাপ করে প্রিন্টেড কপিও দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলএসডি থেকে অভিযোগ পাচ্ছিলাম তারা চাল কম পাচ্ছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার পরিবহণ ঠিকাদারদের একটি দলও স্কেল পরিদর্শন করে। তারা স্কেলে কোনো সমস্যা পাননি। এখন বুঝতে পারছি কেন চাল কম পাচ্ছে এলএসডিগুলো। হয়তো পরিবহণের সময় পথে কেউ ট্রাক থেকে কিছু চাল সরিয়ে ফেলছে।