পুলিশ স্বামীর বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে হ্যাপী

লেখক: Amadersomaj
প্রকাশ: ১ বছর আগে


রতন দে,মাদারীপুর প্রতিনিধি॥ গর্ভের সন্তান নষ্ট, যৌতুকের জন্য মারধর এবং স্বামী-স্ত্রীর অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ভিডিও গোপনে ধারন করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি ও হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখম এর অভিযোগে পুলিশ সদস্য আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে মামলা সহ প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্ত্রী হ্যাপী আক্তার।

ডাসার উপজেলা প্রেসক্লাবে হাজির হয়ে অশ্রু ঝরা ও কান্নাজরিত কন্ঠে এমনটাই বললেন স্ত্রী হ্যাপী আক্তার। ন্যায় বিচারের আসায় আজও এভাবেই ঘুরছেন মানুষের দারে দারে।ভুক্তভোগী ও বিভিন্ন দপ্তরের অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জ জেলার হোগলা কান্দি গ্রামের মোঃ আসাদ সরকারের ছেলে পুলিশ সদস্য মোঃ আবুল খায়ের(কনস্টবল)৬০১/ বিপি নং ৯৬১৫১৮২৬৮৯. বর্তমানে ডাসার থানায় কর্মরত।

সঠিক পরিচয় গোপন রেখে পুলিশের এসআই পরিচয় বরিশাল সদরের সোবহান মিয়ার পুল পশ্চিম কাউনিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল করিম আকনের মেয়ে মোসাঃ হ্যাপী আক্তার এর সাথে ২০১৮ সালে মোবাইল ফোনে পরিচয় এবং প্রেমের সম্পর্ক হয়। বিয়ের প্রস্তাব দিলে মেয়ের পরিবার প্রত্যাখান করলেও ভালবাসার টানে পুলিশ সদস্য আবুল খায়ের হ্যাপী আক্তারকে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার ৭ নং চরকেয়ার ইউনিয়নের মুন্সির হাট নামক সংলগ্ন কাজী অফিসে নিয়ে ২০/১১/২১ইং তারিখ ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক ২ লাখ টাকা দেন মোহরানা ধার্যে বিয়ে করেন। উক্ত বিয়ে স্বাক্ষী হন আবুল খায়েরের দুই বন্ধু রোমান ও মাহফুজ। বিয়ের পর দেড় বছর সংসার জীবন ভালই চলে এবং ইতিমধ্যে হ্যাপী আক্তার ৩ মাস ১৯ দিনের অন্তসত্তা হন। তখন হেপি যানতে পারেন তার স্বামী পুলিশের এসআই না সে পুলিশের কনস্টবল। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথাকাটির এক পর্যায় আবুল খায়ের এএসআই পদে পদোন্নতির জন্য টাকা লাগবে বলে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। হ্যাপী তার পরিবারকে কোনমতে বুঝিয়ে পরিবারকে দিয়ে ধারদেনার মাধ্যমে সাড়ে ৩ লাখ টাকা এনে তার স্বামীকে দেন। কিছুদিন যেতে না যেতে আবুল খায়ের হ্যাপীকে মারধর ও নির্যাতন করে আরও ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন এবং বলেন তা নাহলে আমি তোকে তালাক দিব। হ্যাপী পুনরায় যৌতুক দিয়ে অস্বীকার করলে মারধর করলে অঞ্জান হয়ে পরলে স্বামী আবুল খায়ের তাকে মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে স্ত্রীর সঠিক নাম গোপন রেখে অধরা নামে ভর্তি করেন। জ্ঞান আসলে হ্যাপী তার বেডে দেখেন অধরা নামে একটি ডাক্তারের ফাইল এবং নিজেই অনুভপ করেন তার পেটে বাচ্চা নেই, কিছুটা ব্লেডিং হচ্ছে। তখন তার স্বামীর কাছে যানতে চাইলে নাম কেটে হ্যাপীকে নিয়ে বাড়ি চলে যান। এর পরও টাকার দাবির এক পর্যায় শাশুড়ি মলুদা বেগম ০৫/০৩/২৩ ইং ঘর থেকে হ্যাপীকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা লাগিয়ে দেন। পরে হেপি ঘটনার বিষয় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অবহিত করেন। স্বামী আবুল খায়ের পুনরায় আবার ছলচাতুরির মাধ্যমে হেপি আক্তারকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে মারধর করেন।

এ ঘটনায় হ্যাপী ০৯/০৩/২৩ ইং ন্যায় বিচারের পাবার আসায় পুলিশের আইজিপি সহ প্রশাসনিক একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এবং ২০/০৩/২৩ইং বরিশাল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে বাদি হয়ে সি আর নং ৪৮/২৩ একটি মামলা দায়ের করেন।

অভিযোগের ভিক্তিতে পুলিশ আবুল খায়েরকে ঢাকা থেকে মাদারীপুরের ডাসার থানায় বদলি করেন এবং মাদারীপুর জেলা পুলিশ (অপারেশন) এ এসপি মনিরুল ইসলামকে তদন্তভার দেয়ার কারনে হ্যাপীকে মাঝে মধ্যে এসপি অফিস মাদারীপুরে বার বার যাওয়া আসায় গত ২৮/০৫/২৩ ইং বরিশাল ফেরার পথে গৌরনদী খাঞ্জাপুর এলাকা নামক স্থানে পৌছালে মটোরসাইকেল যোগে পুলিশ আবুল খায়ের সহ ৩ জন হ্যাপী আক্তারকে অটো থেকে জোর করে নামিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম সহ শরীরের কাপুড় ছিরে ফেলেন, তখন তার আর্তচিৎকারে স্থানীয় পথচারী হাচিনা সহ কয়েকজন এসে তাকে উদ্ধার করে বরিশাল সেবাচিম হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। সার্জারি ওয়ার্ড থেকে ওসিসিতে ভর্তি ও প্রেরন করলে হ্যাপী সুচিকিৎসা সহ কোন আইনি সহায়তা পান নি।

এ ঘটনায় হ্যাপী আক্তার বাদি হয়ে ৩১/০৫/২৩ ইং তারিখ বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন স্বামী পুলিশ সদস্য মোঃ আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে।

মহামান্য আদালত মামলাটি গৌরনদী থানার পুলিশকে এফআই আর এর নির্দেশ দেন। যার জি আর নং ৬/১১৭ তারিখ ০৪/০৬/২৩ইং. আরও উল্লেখ করেন, বরিশাল সেবাচিম হাসপাতালের ওয়ান ষ্টপ ক্রাইসিস সেন্টার(ওসিসি) এ ভর্তি হয়ে তিনি পায়নি সুচিকিৎসা সহ কোর আইনি সহায়তা। এ ঘটনার অনুকুলে পুলিশ সদস্য আবুল খায়ের এর বিরুদ্ধে বরিশাল আদালতে আরও দুটি পৃথক মামলা দায়ের করেছেন। এতো কিছু হওয়ার পরও আসামী আবুল খায়েরকে গ্রেফতার করেনি বলে জানান ভুক্তভোগী হ্যাপী আক্তার।

ভুুক্তভোগী হ্যাপী আক্তার বলেন, আমার অগোচরে আমার স্বামী, স্বামী-স্ত্রীর শারিরীক সম্পর্কের দৃশ্য গোপনে তার পিছন থেকে মোবাইলের মাধ্যমে ভিডিও করেন, ভিডিওতে আমাকে সম্পর্ন দেখা গেলেও আমার স্বামী আবুল খায়ের এর শুধু পিছনের বডি দেখা যায় কিন্তু তার চেহারা দেখা যায় না। সম্প্রতি সেই ভিডিও আবুল খায়ের এর বন্ধু মুন্সিগঞ্জ ডিসি অফিসের এডিসির পিএস রোমান আমার ইমু নাম্বারে সেন্ট করেন এবং আমি ভিডিওটি ডাউনলোড করার আগেই আবার ডিলেট করেন। আমি মামলা সহ সকল অভিযোগ তুলে না নিলে গোপনে ধারনকৃত স্বামী-স্ত্রীর ভিডিওর মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ ইন্টানেটে ছেরে দেয়ার হুমকি প্রদান করে আসছে। আমি আজ খুবই অসহায়, পিতা হারা, মাতা থেকেও নেই ক্যানসারে আক্রান্ত। ভাইদের সংসারে থাকতে হয়। তারা খাবার দিলে খেতে পারি না দিলে আর খেতে পারি না।

আমি ন্যায় বিচারের আসায় আজ মানুষের দারে দারে ঘুরছি এবং আপনাদের কাছে আসছি,ন্যায় বিচার পেতে আমাকে একটু সহায়তা করুন।

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য মোঃ আবুল খায়ের অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ ছাড়া কিছুই বলতে পারব না।

মাদারীপুর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের এএসপি (অপারেশন) মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ সদস্য আবুল খায়ের এর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে।

IT Amadersomaj