বায়েজিদে ভূমিদস্যুদের তাণ্ডবে দিশেহারা আব্দুল নবী’র পরিবার 

লেখক: Amadersomaj
প্রকাশ: ১২ মাস আগে


ক্রাইম রিপোর্টার: চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানার পূর্ব নাছিরাবাদের বাংলাবাজার ২ নং রোড আর এস খতিয়ানের ৫৯২ ও আর এস দাগের ৩৫ এর অন্তর্ভুক্ত বিএস ১০৭৮ ও বিএস খতিয়ান ২৮৩ এর জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পাশ্ববর্তী ভূমিদস্যুও কিশোর গ্যাংরা। বারংবার হামলা, হুমকি ও নানা ষড়যন্ত্রে অসহায় অবস্থায় দিন যাপন করছেন জায়গার মালিক আব্দুল নবী (৩৪)।

আব্দুল নবী জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে ভোগ দখল অবস্থায় বেশ কয়েকবার হামলা, ভাংচুর ও নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। ইতিমধ্যে ভূমিদস্যুদের তান্ডবে মারাত্মক জখম হন আব্দুল নবীসহ বেশ কয়েকজন। ভূমিধস্যু বহিরাগত কিশোর গ্যাংদের হাত থেকে রেহাই পায়নি ২ বছরের দুগ্ধপোষ্য শিশু আরাফাত। ভূমিদস্যুদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শিশু আরাফাতের মাথায় মারাত্মক জখম হয়। একই সাথে ভূমিদস্যুরা তার দোকান ও ভাড়াঘর ভেঙ্গে ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছেন।

চলতি মাসের ৩ তারিখ সন্ধ্যা ৬ টা থেকে চলে দফায় দফায় ভূমিদস্যুদের তান্ডব।

তান্ডব চালানো ভূমিদস্যুরা হলো- বায়েজিদ বোস্তামী থানার পূর্ব নাছিরাবাদের বাংলাবাজার ২ নং রোডের বাসিন্দা শামসুল ফোরম্যানের পুত্র কফিল উদ্দিন জনি (৪০), নুরু কেরানীর পুত্র মোঃ ফরিদ (৪০), মোঃ আজমের পুত্র মোঃ ফারুক (৩৫), মাহমুদর রহমানের পুত্র মোঃ এমদাদুল্লা (৫০), আজম উদ্দিন (৫৫) ও জাহাঙ্গীর (৩০)।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বরের ১২ তারিখ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার পূর্ব নাছিরাবাদের এ জলিল রোড়ের নুর আহমদ কমিশনার বাড়ীর মরহুম নুর আহাম্মদের কন্যা নুরুন নাহার, পুত্র দিদারুল আলম, কন্যা হাসিনা মমতাজ, ফরিদা আকতার ও গোলজার বেগমের পৈত্রিক সম্পত্তি আর এস খতিয়ানের ৫৯২ ও আর এস দাগের ৩৫ এর অন্তর্ভুক্ত বিএস ১০৭৮ ও বিএস খতিয়ান ২৮৩ বায়েজিদ বোস্তামী থানার ২ নং জালালাবাদ এলাকার মালেকের বাড়ির আব্দুল নবী রেজিষ্ট্রিকৃত অপ্রত্যাহার যোগ্য পাওয়া অব অ্যাটর্নি মূলে মালিক ও জায়গা ভোগ দখল করে আসছেন। যাহার দলিল নং ১৩৬৪৩।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, জায়গা নেওয়ার পর থেকে কফিল উদ্দিন জনি গংরা আব্দুল নবীর জায়গাটি তাদের দাবি করে ভোগ দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। ২০২০ সালের পর থেকে কফিল উদ্দিন জনি গংরা বেশ কয়েকবার জায়গাটি দখলে নিতে দফায় দফায় হামলা চালায়। এরিসাথে আব্দুল নবীকে হুমকি ধমকি দিতে থাকে। আর তার জায়গায় স্থিত বসত ঘর ও দোকানপাটে ভাংচুর, লুনটন ও হামলা চালায়। এমনি তার ২ টি দোকান ও ভাড়াঘর ধুলিসাৎ করে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা প্রতিবেদককে জানান, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখ সন্ধ্যা ৬ টায় কফিল উদ্দিন জনি (৪০), মোঃ ফরিদ (৪০), মোঃ ফারুক (৩৫), মোঃ এমদাদুল্লা (৫০), আজম উদ্দিন (৫৫) ও জাহাঙ্গীর (৩০)সহ আরো কয়েকজন ভূমিদস্যু আব্দুন নবী’র জায়গাটি দখলে নিতে সশস্ত্র হামলা চালায়। তারা আব্দূল নবী’র জায়গাটিতে প্রবেশ করে তার ভাড়াঘর, দোকানে এলোপাথাড়ি ভাংচুর, লুনটন করতে থাকেন। ভাড়াটিয়া ও দোকানদারদের একাধিক বার মারধর তথ্য পাওয়া গেছে।

একপর্যায়ে আব্দুল নবী’র ভাড়াটিয়া কাউছার বেগম বাঁধা দিতে আসলে কফিল উদ্দিন তার হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাউছার বেগমকে আঘাত করতে গেলে সেই সময় তার কোলে থাকা দেবর নুর কবিরের ২ বছরের দুগ্ধপোষ্য শিশু আরাফাতের মাথায় আঘাত লাগে। মূহুর্তে শিশু আরাফাত মাথায় জখম হয়ে কাতরাতে থাকে। এরপরে কফিল উদ্দিন গংরা আরো বেপরোয়া হয়ে ভাংচুর অব্যাহত রাখে।

নুরুল কবির প্রতিবাদ করতে গেলে ভূমিদস্যু ফরিদ লোহার রড দিয়ে মারাত্মকভাবে আঘাত করে এতে নুরুল কবিরের পায়ে গুরুতর জখম হয়। এছাড়া তাদের হামলায় আরো বেশ কয়েকজন আহত হন। কফিল উদ্দিন গংরা এসময় দোকানে রক্ষিত সমস্ত টাকা পয়সা ও জিনিসপত্র লুনটন করে। আব্দুল নবী’র ২ টি দোকান ও ভাড়াঘর ভেঙ্গে ধুলিসাৎ করে ফেলে। এসময় উপস্থিত সালেহ আহমদ সরকারী জরুরী সহায়তা হেল্প লাইন ৯৯৯ এ কল করলে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

কাউছার বেগম প্রতিবেদককে জানান, ৩ তারিখ সন্ধ্যা আমি ঘরে অবস্থান করছিলাম এমন সময় আমাদের পাশ্ববর্তী কফিল উদ্দিন জনি , মোঃ ফরিদ , মোঃ ফারুক , মোঃ এমদাদুল্লা , আজম উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর সহ আরো কয়েকজন আমাদের দোকান ও ভাড়াঘরে ভাংচুরের ও হামলা করে আমি প্রতিবাদ করলে কফিল উদ্দিন জনি আমাকে কিরিচ দিয়ে আঘাত করে তার আঘাত সে-সময় আমার গায়ে না লেগে আমার কোলে থাকা আমার দেবরের ২ বছরের ছেলে আরাফাতের মাথায় লাগে। এতে আরাফাতের মাথায় মারাত্মক জখম হয়।

নুরুল কবির প্রতিবেদককে জানান, ৩ তারিখ আমি দোকানে অবস্থায় আমাদের উপর হামলা হলে আমি প্রতিবাদ করায় ফরিদ লোহার রড দিয়ে মারাত্মকভাবে আঘাত করে এতেআমার পায়ে গুরুতর জখম হয়।

প্রত্যক্ষ্যদর্ষী সালেহ আহমদ জানান, আব্দুন নবীর জায়গায় ৩ তারিখ বেশ কয়েক জন মিলে হামলা ভাংচুর চালায়। সে-সময় শিশু আরাফাত ও দোকানদার নুরুল কবিরসহ বেশ কয়েকজন মারাত্মক আহত হন। আমি সরকারী জরুরী সহায়তা হেল্প লাইন ৯৯৯ এ কল করলে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে ও হাসপাতালে পাঠায়।

আব্দূল নবী মোঠোফোনে প্রতিবেদককে জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমার জায়গা আমার প্রতিবেশী কফিল উদ্দিন জনি গংরা পাবে বলে আমার জায়গাটি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে‌। ‌এরিমধ্যে জায়গাটি দখলে নিতে বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়েছে ও ভাংচুর করেছে। সর্বশেষ তারা ৩ সেপ্টেম্বর আমার জায়গা দখল নিতে সশস্ত্র হামলা চালায়। আমার ২ দোকান ও ২ টি ভাড়া ঘর ভাংচুর করে ধুলিসাৎ করে দিয়ে আমার প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে ও দোকানে ব্যাপক লুটপাট চালায় এরিসাথে আমার ভাড়াটিয়ার শিশুপুত্রের ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে ও কয়েকজনকে মারাত্মক জখম করে।

তিনি আরো জানান, আমার জায়গা তারা পাবে বলে দাবি করলেও ২ নং জালালাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমাদের ২ পক্ষকে মৌখিক ভাবে মিমাংসা জন্য ডাকলে আমি আমার সমস্ত ডকুমেন্টগুলো উপস্থাপন করলেও তারা উপস্থিত হননি। কাউন্সিলর দ্বিতীয় বার সার্ভেয়ার সহ উভয় পক্ষকে বিষয়টি মীমাংসা করতে বসতে বললেও কফিল উদ্দিন গংরা উপস্থিত হননি। ৩ তারিখের ঘটনার পর বায়েজিদ বোস্তামী থানার অফিসার ইনচার্জ সরেজমিনে এসে ভাংচুর লুনটন সব দিক দেখে যান ও এসআই আব্দুল মতিনকে তদন্তের নির্দেশ দেন। ভাংচুর, লুনটন ও আমার ডাড়াটিয়াদের উপর হামলার প্রতিবাদে আমি ১২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি অভিযোগ করেন। যার সি,আর মামলা নং ৫৫২/২০২৩। বর্তমানে বিষয়টি পিবিআই এর কাছে তদন্তাধীন।

এ বিষয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ফেরদৌস জাহান এর সাথে মোঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি আমাদের প্রতিবেদককে জানান, ঘটনার তাৎক্ষণিক আমি ফোন পেয়ে একাধিক পুলিশের গাড়ি পাঠিয়ছি, তবে অত্র বিষয়ে আমার থানায় কেউ অভিযোগ বা মামলা করতে আসেনি।

IT Amadersomaj