মা আমার শক্তি

লেখক: মোহাম্মদ শেখ কামালউদ্দিন স্মরণ
প্রকাশ: ১ বছর আগে
মোহাম্মদ শেখ কামালউদ্দিন স্মরণ, লেখক ও কলামিস্ট।

প্রিয় পাঠক,

আপনাদের দিন-দৈনিক জীবনের শিক্ষা গ্রহণের জন্য “মা আমার শক্তি এবং আমি কেন মিথ্যা কথা বলি” এই শিরোনামে আজকের জৈবিক-জীবনময় লিখা আমার। কেউ কেউ তাদের জীবনের গল্প লুকিয়ে রাখলেও কোন না কোন কারণে তা প্রকাশ পায়। কিন্তু আমার জীবনের গল্প যে পাসওয়ার্ড দিয়ে আটকানো আছে, তা আমি ওপেন না করা পর্যন্ত কারো জানার ক্ষমতা নেই। তাই আজ আমি আমার জীবনের গোপনীয় কিছু রহস্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করবো। তবে এ সমস্ত বিষয় জানতে হলে,আপনি আমার লিখার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। আমার এই লেখার মাধ্যমে সর্বাধিক সত্য ও আমার কিছু কিছু মিথ্যা বলার কারণ ব্যাখ্যা করব। তার আগে একটা ছোট গল্প আপনাদেরকে শুনিয়ে নেই ।বিশ্বের প্রাচীন রাজধানীতে (রোম)যিনি প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়েছেন, তাঁকে অবশ্যই ক্যামেলিয়ন হতে হয়েছে, যিনি চারদিকের রংয়ের সঙ্গে রং মেলানোর জন্য রং বদলাতে পারেন। প্রটিউস হতে হয়েছে,যিনি সবরকম আকার, সবরকম আকৃতি ধারণ করতে পারেন। তাহাকে অবশ্যই হতে হবে নমনীয়,সহজবশ্যসহ,কৌশলে ইঙ্গতকারী রুদ্র,দুর্জয়,প্রায়শ নীচে,কখনো আন্তরিক, কখনো বিশ্বাসঘাতক,সব সময় তার জ্ঞানের একটা অংশগ্রহণকারী,এক সুরে কথা না বলার অধিকারী,ধৈর্যশীল,তার মুখ ভাবের সম্পূর্ণ প্রভু,যখন অন্য লোক অগ্নির্সমা তখন বরফের মত শীতল;দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি যদি হৃদয়ের দিক থেকে ধার্মিক না হন—উপরোক্ত গুণাবলী সম্মিলিত এটা হওয়াই স্বাভাবিক—তার মনে অবশ্যই ধর্ম থাকতে হবে,অর্থাৎ তাঁর মুখাভাবে, তাঁর ঠোঁটে,তাঁর হাবভাবে; যদি তিনি একজন সৎ মানুষ হন ,তাঁর নিজেকে পাকা বদমাইশ কপট জেনেও অবশ্যই নিঃসন্দেহে সহ্য করতে হবে । যদি কোনো মানুষের হৃদয় এরকম জীবন অপছন্দ করে তাঁর রোম ত্যাগ করে অন্যত্র ভাগ্য খোঁজা উচিত । হয়তো আমি জানি না, আমি নিজের প্রশংসা করছি, না জেনে নিজেকে ক্ষমা করছি,কিন্তু ওই গুনগুলির মধ্যে আমার মাত্র একটি আছে– তার নাম সহজবশ্যতা।

 

যে চরিত্র নিয়ে আমি জন্মেছি, আমি তা নাও হতে পারি; উত্তরাধিকারসূত্রে আমি যে গুণাবলী লাভ করেছি, তারপরেও আমার বাবা-মা,বন্ধুবান্ধব, সঙ্গী-সাথীরা আমার ব্যক্তিত্বকে আকার দিয়েছে। কুমোর পাড়ায় কুমোরেরা যেভাবে কাদা মাটি দিয়ে যা ইচ্ছে হয়, তাই তৈরী করে,আমিও আমার জীবনকে সেই ভাবে গড়ে তুলেছি। সব কথার এককথা! আমি আমাকে শিল্পী হিসেবে গড়ে তুলেছি,যে শিল্পী নিজেকে সৃষ্টি করে।

 

আমি জানি, নিজেকে গড়ার প্রথম পদক্ষেপ হল: আত্মসচেতনতা। নিজেকে অভিনেতা হিসেবে জানা ও নিজের চেহারা এবং আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা। ডিডেরোড যেমন বলেছিলেন, যিনি সব সময় আন্তরিক, তিনি একজন খারাপ অভিনেতা। যে লোকেরা তাঁদের হৃদয় কে হাতে করে ঘুরে বেড়ান, তাঁরা ক্লান্তিকর ও বিব্রতকর। আন্তরিক হওয়া সত্ত্বেও তাঁদেরকে গুরুত্বসহকারে সহানুভূতি পেতে পারেন, যাঁরা প্রকাশ্যে কান্নাকাটি, তাঁরা সামরিক সহানুভূতি পেতে পারেন, কিন্তু তাদের আত্মসচেতনতা শীঘ্রই নিদারুণ অবজ্ঞা ও বিরক্তিতে পরিণত হয়।

 

যাই হোক, আমি বলেছিলাম যে, কেন মাঝে মাঝে মিথ্যা কথা বলি। এর কারণ হলো:চীনাদের একটা কথা আছে, “শূয়োরের বেশে বাঘ মারা।” এটা এক প্রকার প্রাচীন শিকারের কৌশল প্রসঙ্গে বলা।এতে শিকারি শূয়োরের  চামড়া, নাক, এসব  পড়ে শূয়োরের  মতো ডাকতে থাকতো।  তাতে শক্তিশালী বাঘ মনে করত শূয়োর  আসছে, বাঘকে কাছে আসতে দিতো শিকারি,বাঘ অবশ্যই মজার খাবারের আশা করতো। কিন্তু শেষ হাসিটা হাসতেন শিকারি। আমিও এর ব্যতিক্রম নয়,মাঝে মাঝে কিছু মিথ্যা কথা বলার কারণ হলো এই যে, আমি কোথায় যাচ্ছি, এবং আমি কি করছি, এসব বিষয়গুলো কাউকে না বলা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে,আমি যদি সিলেট বিভাগে যাই, তাহলে আমার শত্রুদের কাছে ফাঁকা আওয়াজ শুনাই যে, আমি রাজশাহী বিভাগ গিয়েছিলাম। এতে করে, আমার বিশাল উপকার হয়। তখন শত্রুরা আমাকে ঘায়েল করার জন্য সিলেট বিভাগে খোঁজ করলে, আমি রাজশাহী বিভাগে আমার কাজ হস্তিরে, আরাম-আয়েশে সম্পন্ন করতে পারি। এবং এমনও হয় যে, কারো কারো কাছে আমি একেবারেই অসহায়, অর্থ-সম্পদ জ্ঞান-বুদ্ধি কিছুই আমার নাই। আবার কারো কারো কাছে আমার পরিচয়, আমি এদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদশালী, আমার কোটি কোটি টাকা, আমি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, জো বাইডেনকে পরামর্শ দেই,আমি সৌদির বাদশার সাথে ব্রেকফাস্ট করি। এই সবকিছুর একটাই কারণ,আমি মানুষ, আমারও বেঁচে থাকার অধিকার আছে । তাই তো আমি পানির মতো। পানি কে আপনি যে-পাত্রে ধারণ করবেন, পানি সেখানে সেরকম আকার ধারণ করবে। আমিও এর ব্যতিক্রম নয়, জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য যেখানে যেমন হওয়ার প্রয়োজন, সেখানে সে রকম হই। আর এটাই আমার মাঝেমধ্যে মিথ্যে বলার কারণ। আমি নেকড়ে বা খেকশিয়ালের জন্য একই ফাঁদ পাতিনা। আমি এমন কোন জায়গায় টোপ ফেলি না,যেখানে আমার শিকার তাহা গিলবে না । বিশ্বাস করুন, আমি শিকারকে আগে ভালোভাবে জেনে নেই, তারপর এর অভ্যাস ও পালানোর ধরন জানার চেষ্টা করি। তারপর শিকার ধরি।

 

আমি জানি, মানুষ যেহেতু স্বভাবত সামাজিক জীব।সামাজিক আদান-প্রদান ও মেলামেশার ওপর ক্ষমতা নির্ভর করে। ক্ষমতাবান হওয়ার জন্য অবশ্যই আমাকে সবকিছুর মাঝখানে থাকতে হবে। আমাকে ঘিরে এসব কার্যকলাপ হতে হবে, এবং যে কেউ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারে, সেই ষড়যন্ত্রের বিষয়টা আমার পুরোপুরি জানতে হবে। অধিকাংশ লোকের বিপদ তখন আসে, যখন তারা বিপন্ন বোধ করে। এরকম অবস্থায় তাঁরা নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়ে এক প্রকার দুর্গে আশ্রয় নেন।সেটা করে তারা আরও অনেক কম লোকের ওপর খবরা-খবর এর জন্য নির্ভরশীল হয়ে পড়েন এবং তাদের চারদিকে কি ঘটেছে সে সম্পর্কে তাদের ধারণা হারায়। তাঁরা কৌশল পরিবর্তনের সুযোগ হারিয়ে সহজলভ্য বস্তু হয়ে পড়ে এবং তাদের বিচ্ছিন্নতা তাদেরকে বৃদ্ধমূল বিভ্রান্তি জনিত মস্তিষ্কবিকৃত করে। যেমনি যুদ্ধবিদ্যায়, তেমনি অধিকাংশ খেলায় বিচ্ছিন্নতা প্রায়ই পরাজয় ও মৃত্যুতে শেষ হয়। 

 

মা আমার শক্তি। মায়ের আশীর্বাদ সব সময় আমার সাথে থাকে।  আমার মায়ের বিশ্বস্থতা আমাকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে এসেছে। সর্বসময় মায়ের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অন্তর্নিহিত আকর্ষিত। আমি জেনেশুনে  আমার জীবনের অনিশ্চয়তা ও বিপদের ক্ষণে দেশ ও জাতির স্বার্থে কোন কাজে অংশগ্রহণ করলে, কখনোই আমার মা, আমাকে নিষেধ করেন না। কারণ, আমার মায়ের অটল বিশ্বাস যে, যত বিপদই আসুক, আমি সেখানে বিজয়ী হব। আর এগুলো জেনে শুনেও মা আমাকে না-নিষেধ থেকে বিরত হয়ে ভালো কাজে সব সময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। আমি কোথাও রওনা হলে, তিনি নিষেধ এর বদলে, আল্লাহর কাছে সর্ব সময় প্রার্থনা করেন যে, আমার ছেলে যে কাজে অংশগ্রহণ করুক, আল্লাহ আপনি তাকে হেফাজত করুন । আমার মায়ের এই প্রার্থনা আমাকে সর্বসময় শক্তি যোগায়।

 

 আমিও জীবনের অনিশ্চয়তা ও বিপদের ক্ষণে নিজের মধ্যে লুকিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাকে দমন করি। পরিবর্তে নিজেকে অন্যের কাছে মেলে ধরি, পুরনো বন্ধু খুঁজি,নতুন বন্ধু সংযোজন করি।

 

মোহাম্মদ শেখ কামালউদ্দিন স্মরণ

লেখক ও কলামিস্ট ।

  • মা আমার শক্তি
  • মোহাম্মদ শেখ কামালউদ্দিন স্মরণ
  • IT Amadersomaj