কালীগঞ্জে এমটিএফই অ্যাপের ফাঁদে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে মানুষ, বিনিয়োগের টাকা যাচ্ছে ক্যাসিনোতে

লেখক: Amadersomaj
প্রকাশ: ১ বছর আগে


নিজস্ব প্রতিবেদক॥ লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে টাকা বিনিয়োগ করে এমটিএফই অ্যাপের ফাঁদে পড়েছেন হাজারও মানুষ।  জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মানুষ বিদেশি বিভিন্ন অ্যাপে বিনিয়োগ করে দ্রুত কোটিপতি হতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তবে ওই সব অ্যাপের প্রচারণার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এ কারণে অফিস খুলে এসব বিদেশি অ্যাপে বিনিয়োগ করে দ্রুত অর্থ উপার্জন করার প্রচারণা চালাচ্ছে একটি প্রতারক চক্র।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফেসবুক প্রোফাইলে নিউজ ফিডে বিভিন্ন অ্যাপের অ্যাড দেখা যায়। এর মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে এমটিএফই নামের একটি অ্যাপ। এ অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করলে দ্রুত কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মানুষের কাছে প্রচার করছে প্রতারক চক্রের  কিছু যুবক। এমটিএফই অ্যাপ অফিস নিয়ে বসেছে এ উপজেলায়। এটি পরিচালনা করেন উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের কাজিরহাট এলাকার হোলাম রাব্বানী ও তার তাই হাফিজুল নামের দুই যুবক। গোলাম রাব্বানী একজন প্রবাসী তিনি ইতিপুর্বে মালোয়শিয়ায় শ্রমিক হিসাবে কাজ করেছেন। রাব্বানীর পিতা মৃত মন্টু ছিলেন একজন তেল ব্যবসায়ী। এ সকল প্রতারক চক্রের  কথায় অ্যাপের ফাঁদে পা দিয়ে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন অনেকে। এরা বিভক্ত হয়ে মানুষকে এমটিএফই অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করছে। এমটিএফই অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করা একাধিক যুবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কোনো পরিচিত মানুষ ওই অ্যাপের প্রতিনিধি হয়ে তাদের প্রলোভন দিয়েছে। অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন ২ থেকে ৫ হাজার টাকা লাভ হবে ও পাওয়া যাবে। তার মাধ্যমে টাকা দিলে তাদের একটি অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়। পরে সারা দিনে ৩০ মিনিট ওই অ্যাপ খুলে বসে থাকতে হয়। সেখানে তাদের নিজ নিজ অ্যাকাউন্টে কিছু পয়েন্ট ডলার হিসেবে জমা হয় প্রতিদিন রাত ১১ টার পরে।  মাঝে মাঝে টাকাও তুলতে পারে তারা।

এমটিএফই অ্যাপে প্রচারকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, ‘আমার মাধ্যমে যদি কেউ এ অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করে তার কিছু কমিশন আমার অ্যাকাউন্টে জমা হয়। বেশি টাকা বিনিয়োগ করলে বেশি কমিশন পাব। এমনভাবে যদি ১০০ জনকে বিনিয়োগ করাতে পারি, তাহলে আমি অফিস পাব ও আমার পদ সিও হবে। এভাবেই হঠাৎ কেউ লাখ লাখ টাকার মালিক হচ্ছে। তবে অ্যাপ বন্ধ হয়ে গেলে দায়ভার তিনি নেবেন না বলেও জানান। সাম্প্রতিক সময়ে এর আগে কালীগঞ্জ উপজেলায়  এ রকম স্প্যাইসি নামে একটি আপসের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ প্রতারনার শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। পরে এদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এ সকল আ্যাপসের কোন অনুমোদন আমাদের দেশে নেই বলে জানা গেছে। এসব অ্যাপের মাধ্যমে দেশের টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এসব বিষয় প্রতারণার শিকার হয়ে যদি কেউ অভিযোগ দেন, তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করনে প্রশাসন। এমটিএফই আ্যাপসে বিনিয়োগকারী অনেকে জানিয়েছেন ২৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে সদস্য হলে প্রতিদিন রাত ১১ টার পরে ৫০০ টাকা করে লাভ পাওয়া যায়। বিনা পরিশ্রমে টাকা ইনকাম করা যায়। তাই এ আ্যাপসের দিকে মানুষ বিনিয়োগে ঝুঁকে পড়েছে। আর এতে কোটি কোটি হাতে হাতিয়ে নিচ্ছে আ্যাপসটির পরিচালকেরা।

জানা গেছে এ বিনিয়োগকৃত টাকা ক্যাসিনোতে পুঁজি হিসাবে খাটানো হচ্ছে। আর সেখান হতে কিছু লভ্যাংশ এদের দেয়া হয় বলে জানা গেছে। তবে স্থানীয়দের মতে এমন অসংখ্য আ্যাপসের ফাঁসে পা দিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়েছেন। কিছুদিন পর অ্যাপসগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না।  এ এমটিএফই ও হয়তো একদিন খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেদিন হাজার হাজার বিনিয়োগকারী বিনা পরিশ্রমে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়বেন।

এ বিষয়ে আ্যাপস পরিচালনাকারী রাব্বানী কে মুঠো ফোনে কল করা হলে সে জানায়, আ্যাপসটি আমার নয় আমি সামান্য ২৫ হাজার টাকা ডিপোজিট করেছি। এরআগেও করেছি প্রতারিত হয়েছি। এবার এটায় করেছি কিছু টাকা পাচ্ছি। তবে এগুলো যে কোন সময় বন্ধ হতে পারেন বলেও তিনি জানান। তবে যারা ডিপোজিট করছে এটা তাদের দায়িত্বে করছে।

IT Amadersomaj