অটল আ.লীগ, সংবিধানের বাইরে যাবে না

লেখক: Amadersomaj
প্রকাশ: ১ বছর আগে


সময় সংবাদ রিপোর্টঃ ভোটের রাজনীতিতে কোনোভাবেই বিএনপির দাবির কাছে নতি স্বীকার করবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর দলটি। এর বাইরে ভিন্ন কিছু ভাবছেন না দলের নীতিনির্ধারকরা। এমনকি তারা বিএনপিসহ বিরোধীদের একদফার আন্দোলনও খুব বেশি পাত্তা দিতে নারাজ। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই দায়িত্ব পালন করবেন। এতে কোনো দল নির্বাচনে না এলে তার দায়ভার সেসব দলের। কেউ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করতেও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, দলীয় সভা, এমনকি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকেও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে দলের সব স্তরের নেতারাও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একই সুরে কথা বলছেন। গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘নির্বাচন নির্দিষ্ট কোনো দলের জন্য অনুষ্ঠিত হয় না বা কোনো দলের জন্য থেমে থাকে না। সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

জানা গেছে, সংবিধানের নির্দেশনা মেনে নির্বাচন করার প্রশ্নে এক চুল ছাড় দিতেও রাজি নয় আওয়ামী লীগ। এ কারণে বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনায় রাজি নয় ক্ষমতাসীন দল।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে। জনগণ সেই নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে মুখিয়ে আছে। বিশ্ববাসীর কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া হবে, যেখানে দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবে। নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব পালন করবে, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যরা ‘রুটিন’ দায়িত্ব পালন করবে। কোনো দল যদি না আসে, তবে তাদের জোর করে আনা হবে না।’

সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের আয়োজন করবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এই সময়ে নির্বাহী প্রধান হিসেবে রুটিনমাফিক কাজে ন্যস্ত থাকবেন। সংবিধানের ৫৭ (৩) ধারায় বলা আছে, প্রধানমন্ত্রী একজন নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। সংবিধানের এ নির্দেশনা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন—এ নিয়ে দ্বিতীয় কোনো ভাবনা নেই আওয়ামী লীগের।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘নির্বাচনে আসা যেমন সব গণতান্ত্রিক দলের দায়িত্ব, অন্যদিকে নির্বাচনে না আসার সিদ্ধান্ত দল হিসেবে বিএনপি নিতেই পারে। তবে, আমরা শেষতক আশা করব বিএনপি নির্বাচনে আসবে। আন্দোলনের অংশ হিসেবেই তারা নির্বাচনে আসুক। সাংবিধানিকভাবে দিনক্ষণ মেনেই নির্বাচন হবে। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেবে আর নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা রুটিন কাজ করবেন। জনগণও নির্বাচন চায়, সেই নির্বাচন ঠেকানোর সাধ্য বিএনপির নেই। ঠেকাতে গেলে দেশে-বিদেশে তারা সন্ত্রাসী দল হিসেবে আবারও পরিচিত হবে। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করব।’

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নির্বাচনের সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বহাল থাকলেও তারা শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এবং নির্বাচনী বিধিমালায় যেসব নির্দেশনা, সে অনুযায়ী তপশিল ঘোষণার পর প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের বদলি, পদায়নসহ কিছু কিছু কাজে সরকারকে কমিশনের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে—এমন উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন, নির্বাচনের সময় সরকারি প্রটোকল গ্রহণ, ডাকবাংলোসহ সরকারি স্থাপনার ব্যবহার বা এ জাতীয় কিছু কর্মকাণ্ডে বিধিনিষেধ আরোপ থাকে। আওয়ামী লীগ অবশ্যই এগুলো সম্পূর্ণভাবে মেনে চলবে।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর বর্তমান নির্বাচন কমিশনের একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়ার সক্ষমতা সম্পর্কে সমালোচকরা প্রশ্ন তুললেও আওয়ামী লীগ নেতারা এক্ষেত্রে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন স্থানীয় সরকার ও সংসদ উপনির্বাচনের উদাহরণ তুলে ধরেন। তারা বলেন, দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশন গাজীপুর, সিলেট, বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহীতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সবকটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে। তাছাড়া বেশ কয়েকটি উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলো প্রতিটি অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি এবং প্রতিটি নির্বাচন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনেই হয়েছে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই দায়িত্ব পালন করেছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন সাম্প্রতিক সময়ে ভোটের মাধ্যমে সব মহলের আস্থা অর্জন করেছে। এই স্বাধীন নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সক্ষম। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার ও সংসদ উপনির্বাচন সেটার প্রমাণ। জনগণের ভোটাধিকার সংরক্ষণে আওয়ামী লীগ সবসময়ই লড়াই করেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন যদি কেউ ঠেকাতে চায়, তবে জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে তারা কী চায়। আওয়ামী লীগ জনগণের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’



IT Amadersomaj