সন্তানের জন্য যদি মায়ের শেষ চিঠি টা হতো তাহলে কাঁদবে না বিবেক

লেখক: Amadersomaj
প্রকাশ: ১২ মাস আগে


এনামুল কবীর এনাম বদলগাছী নওগাঁ থেকে: মা মারা যাওয়ার কিছু দিন পর মায়ের ঘরটি পরিস্কার করতে গিয়ে মায়ের হাতের লেখা যদি একটি চিঠি পেয়ে থাকেন,আর চিঠিতে যদি লেখা থাকে কবীর খোকা আমার এই চিঠি তোর হাতে পরবে যখন,তখন আমি তোর কাছ থেকে অনেক অনেক দূরে চলে যাবো, সেই খান থেকে কেউ কোন দিন আর ফিরে আসে না।

তোর অনেক অনেক কথা মনে নেই, তাই একটু চিঠিতে লিখে গেলাম, তোর মনে না থাকা সেই কথা গুলো।তুই যখন ছোট্ট ছিলি একবার তোর গায়ে জ্বর এসেছিল, আমি দিন রাত ঘুমাতে পারিনি। তোকে বুকে নিয়ে বসে ছিলাম,কারন তোকে শোয়াইলে তুই কেঁদে কেঁদে উঠতি।তোর বাবা বলেছিল শুইয়ে রাখতে, কিন্তু আমি যে পারিনি। সেই জন্য তোর বাবা অনেক কথা শুনিয়েছিল।তোকে যখন রাতে বিছানায় শোয়াতাম তুই প্রশ্রাব করে বিজানা ভিজে ফেলতিস, আমি তখন তোকে শুকনো জায়গায় শোয়াতাম আর আমি তোর সেই ভিজা জায়গায় শুয়ে থাকতাম।

যখন তোর বাবা মারা গেলো, অনেক কষ্টে মানুষ করতে হয়েছিল। একটা ডিম ভেঙে দুই টুকরো করে তোকে দুই বেলা খেতে দিতাম। এমনো দিন চলে গেছে আমি শুধু লবণ দিয়ে ভাত খেয়েছি বাবা, কিন্তু তোকে আমি বুঝতে দেইনি।

একদিন রান্না করার মতো চাল ছিল না,কোন উপায় না পেয়ে এক বাড়িতে কাজ করে কিছু চাল এনে রান্না করে তোকে ভাত খাইতে দিছিলাম। হয়তো বা তোর মনে নেই।যখন তোর এস,এস,সি পরিক্ষার ফি দিতে পারছিলাম না,তখন তোর বাবার দেওয়া স্মৃতি টুকু নাকফুল টি বিক্রি করে দিছিলাম। আরও অনেক কথা আছে যা লেখতে গেলে হয়তো খাতা শেষ হবে।কিন্তু লেখা যে শেষ হবে না।

তুই ভাববি এতো কথা তোকে কেন লিখে গেলাম,,,তুমি যখন বড় হলি একটা বড় চাকরি পালি,কিছু দিন পরে বিয়ে করলি,তখন আমি তোকে নিয়ে খুবি ভালোই ছিলাম।

কিছু দিন পর তুই আমাকে চোরের অপবাদ দিয়ে অন্য ঘরে রেখেছিলি,সেই ঘরটাতে আমার অনেক ভয় করতো, কারন ঘরটা তোদের নিকট থেকে অনেক দূরে ছিল।

আমি তোকে একদিন বলেও ছিলাম,দুরে একা একা থাকতে ভয় লাগে,তুই বলেছিলি মরণ আসলে যে কোন জায়গায় আসবে।আমার হাঁটুর ব্যাথাটা বেড়ে ছিল তাই তোকে বলেছিলাম আমাকে কিছু ঔষুধ কিনে দিস বাবা,তুই বলেছিলি এই বয়সে আর ঔষধ খেতে হবে না,এমনি এমনি ভালো হবে।

বিছানা থেকে উঠতে পারতাম না, শরীরে ফোস্কা পরে গিয়েছিল, শরীর থেকে পঁচা গন্ধ বাহির হতো,কত দিন যে গোসল করি নাই,তা জানিনা।তোর ঘর ছিল আমার থাকার ঘর থেকে অনেক দূরে।কখন আসিস আর কখন চলে যাস আমি কিছুই দেখতে পারিনা,তবুও পথের দিকে চেয়ে থাকতাম।

তুই যখন ছোট্ট ছিলি আমি কোলে নিয়ে ভাত খেতাম, কখনও চোখের আড়াল হতে দিতাম না।যখন তুই আমার কোলে পাইখানা করতো, তোর পাইখানা পরিস্কার করতে আমার একটুও ঘৃণা হতো না।কিন্তু তুই যখন আমার কাছে আসছিলি তখন তোর নাকে রুমাল ছিল,আমার শরীর থেকে গন্ধ আসতো বলে, তোর কি বিবেক ছিল না আমার জন্য গোসল করার প্রয়োজন।এক কাপরে কত মাস কত বছর কেটেছি,তা সঠিক বলতে পারি না।

আর তুই যেদিন আমাকে দেখতে গেছিস,আমার খুব ইচ্ছে ছিল তোকে বুকে জড়িয়ে আদর করি,কিন্তু দেসনি তুই সেই সুযোগ। কারন আমার শরীরে ফোস্কা ও ময়লা ছিল।

তোর সেই দামী শার্ট প্যান্ট হবে ভয়েই তোকে বুকে জড়িয়ে আদর করতে পারিনি সেই দিন।

তুই একবারও জিজ্ঞেস করিসনি মা তোর মণ কিছু খেতে চায় কি।খাওয়ার কথা থাক কতদিন যে তোর মুখে মা ডাকটা শুনিনি কবীর। আমার কি অপরাধ ছিল আমাকে তোর কাছ থেকে অনেক দূরে রাখলি।তুই কি পারতি না আমাকে একটা ডাক্তার দেখাতে, তুই কি পারতি না, আমাকে একটা নতুন কাপড় কিনে দিতে,হয়তো বা আমি এই পৃথিবীতে আরও কিছু দিন বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারতাম। তুই জানিস না কোন মা সন্তানের কাছে পেট ভরে খেতে চায় না,শুধু মণ ভরে মা ডাকটা শুনতে চায়,সেটা তুই কখনও বুঝতে চাসনি।

তোকে একটি শেষ অনুরোধ করছি আমার এই চিঠি টা তোর সন্তানদের কে পড়িয়ে শুনাবী।কারন তুই বৃদ্ধ হলে তোর সন্তান যেন তোর সাথে তোর মতো এইরকম আচরণ কাজ না করেন।

বিবেকের আদালতে ভাবন ভাবতে অনুরোধ।এজীবন করিব গঠন, মরনে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভবন।

(এনামুল কবীর এনাম সাংবাদিক, দৈনিক ইনকিলাব, বদলগাছী উপজেলা নওগাঁ।)

IT Amadersomaj