যশোরে করোনা পরীক্ষার ২২ লক্ষাধিক টাকা হজম ! আটকে গেছে ৩ জনের পেনশন

লেখক: Amadersomaj
প্রকাশ: ১১ মাস আগে


নাসিম রেজা : যশোর আড়াইশ শয্যা হাসপাতাল দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নানা খাতের অর্থ যে সরকারি কোষাগারে জমা হয় না তার প্রমাণও মিলেছে। মহামারি করোনার দাপুটি শক্তির কাছে বিশ্ব যখন অসহায় হয়ে পড়েছিল, লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ঠিক তখন করোনা পরীক্ষার ফিসের ২২ লক্ষাধিক টাকা হজম করেছেন হাসপাতালটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যে আত্মসাতের টাকা কোষাগারে জমার নির্দেশ দিয়েছে খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির হিসাবরক্ষক ইসরাফিল হোসেন সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।জানা যায়-করোনা পরীক্ষার ফিসের ২২ লাখ ১৬ হাজার ৭০০ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মেলার পর কোষাগারে ওই টাকা জমার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। হাসপাতালটির সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায়, ডা. আখতারুজ্জামান, প্যাথলজি কনসালটেন্ট ডা. হাসান আব্দুল্লাহ ও টেকনিশিয়ান (ল্যাব) গোলাম মোস্তফা এই মোটা অংকের টাকা আত্মসাত করেছেন। একারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ডা. দিলীপ কুমার রায় ও প্যাথলজি কনসালটেন্ট ডা. হাসান আব্দুল্লাহর পেনশন আটকে রাখা হয়েছে।

হাসপাতালের একাধিক সূত্রের দাবি-করোনা পরীক্ষার ফি আত্মসাতে ৪ জন ফেঁসে গেলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে টাকা সংগ্রহকারী কথিত স্বেচ্ছাসেবীরা। তবে সরকারি অর্থই যে তছরুপ হচ্ছে, তা নয়, দুরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সহজ সরল মানুষ চক্রটির দ্বারা প্রতারিত হচ্ছেন।তবে কাকতলীয়ভাবে পরীক্ষার ফিসের টাকার হিসেবে গড়মিল ধরা পড়েছে। সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে করোনাকালেও বেমালুম ২২ লক্ষাধিক টাকা হজম করা হয়েছে। দুর্নীতিবাজরা জেনে বুঝেই এই মোটা অংকের টাকা হজম করেছেন। তারা জানেন হাসপাতালে বিভিন্ন সেক্টরের টাকা হজম হয় কিন্তু কখনোই তা আমলে নেয়া হয় না। চক্রটি ভেবেছিলেন করোনা ফিসের টাকা হজম করলেও কেউ টের পাবে না।

কিন্তু বিধিবাম, চোরের ১০দিন আর গেরস্তের একদিনের মতো ঘটনা ঘটে গেল করোনা ফিসের টাকা আত্মসাত নিয়ে। সূত্রমতে, ঘটনাচক্রে ৪ জন ফেঁসে গেলেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে চক্রটির অনেকে। এরই মধ্যে চাউর হয়েছে সরকারি কোষাগারে যে টাকা জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, তা জড়িতরা ভাগাভাগি করে জমা দেয়ার তোড়জোড় শুরু করেছেন। বিষয়টি এখন টক অব দ্য হাসপাতাল। যদিও হাসপাতালের বাইরেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

একাধিক সূত্রের দাবি-বিষয়টি আঁচ করতে পেরে হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান প্রাথমিকভাবে ৮০ হাজার টাকা তছরুপের সত্যতা পান। পরে ২০২২ সালের ১২ মার্চ তার নির্দেশে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রহিম মোড়লকে।পত্রপ্রাপ্তির ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। অধিদপ্তরের অডিট টিম তদন্তে নেমে পড়েন।

হাসাপাতাল সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অডিট টিমের সদস্যদের যাচাইয়ে করোনার পরীক্ষার ফিসের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এছাড়া হাসপাতালের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও টাকা আত্মসাত প্রমাণিত হয়। তখনকার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দেন। সেই তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায়, ডা. আখতারুজ্জামান, প্যাথলজি কনসালটেন্ট ডা. হাসান আব্দুল্লাহ ও টেকনিশিয়ান (ল্যাব) গোলাম মোস্তফাকে ২২ লাখ ১৬ হাজার ৭০০ টাকা ফেরতের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ফলে তাদের ৪ জনকে এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। যদিও জড়িতরা ভাগাভাগী করে এই টাকা জমা দিয়ে আরও বড় ধরণের ঘাপলা ধামাচাপা দিতে তোড়জোড় শুরু করেছেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় ২০২১ সালের ১১ মে ও প্যাথলজি কনসালটেন্ট ডা. হাসান আব্দুল্লাহ ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান। করোনা পরীক্ষার টাকা কেলেংকারীর ঘটনায় কর্তৃপক্ষ তাদের ছাড়পত্র দেননি। তাদের পেনশন আটকে রেখেছে। যদিও বিষয়টি জানতে গণমাধ্যম কর্মীদের টানা সময় লেগে থাকতে হয়েছে।ওই দু’জনের পর ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে চাকরি জীবন শেষ করবেন টেকনিশিয়ান (ল্যাব) গোলাম মোস্তফা। বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উল্লিখিত দুই জনের মতো তারও পেনশন আটকে গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, যারা করোনা পরীক্ষার টাকা আত্মসাতের বিষয়টি উদঘাটন করেছেন, তাদের ভেতর থেকেও কেউ কেউ ফেঁসে গেছেন। পরিস্থিতি তাদের প্রকাশ্যে এনেছে। সূত্রমতে, রোগীর সেবা দিতে কথিত যেসব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে, তারা বেমালুম দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। এদের দ্বারা রোগী যেমন প্রতারিত হচ্ছে তেমনি দুর্ব্যবহারের শিকার হচ্ছে। বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে হাসপাতালের হিসাবরক্ষক ইসরাফিল হোসেন বলেন, করোনা পরীক্ষার ফিসের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনাপত্র হাতে এসেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অবগত করা হয়েছে। বিষয়টির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাদের কেউ পেনশন পাবেন না বলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের দাবি-অন্যসব খাতেও তদন্ত হওয়া উচিত। তাহলেই বেরিয়ে পড়বে থলের বিড়াল। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়েছে। এদিকে যশোরের সচেতন মহল আলোচনা চলছে যে এত বড় দূরর্নিতি হলো, দূরর্নিতি দমন কমিশন কিছুই জানে না, বিষয় টি নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বএ মহলে।



Source link

IT Amadersomaj