খুলনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সভাপতি সাংবাদিক শামসুর রহমানের ১৫ তম মৃত্যু বার্ষিকী 

লেখক: Amadersomaj
প্রকাশ: ১১ মাস আগে


মোঃ ফিরোজ আহমেদ পাইকগাছা : আগামী ২ নভেম্বর বুধবার পাইকগাছা তথা দক্ষিণঞ্চলের রত্ন, গর্ব, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ , তত্কালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) শামসুর রহমানের ১৪ তম মৃত্যু বার্ষিকী। তিনি গত ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর ইন্তিকাল করেন “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন” তিনি অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপনকারী, ইসলামী আন্দোলনের অকুতোভয় অগ্রসৈনিক অত্যন্ত স্পষ্টভাষী সাবেক এমএনএ (জাতীয় পরিষদ সদস্য) শামসুর রহমান আর কোন দিন আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন না। তিনি সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন, এই আদর্শের প্রতিক ১৯১৫ সালের ৫ মে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের মঠবাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মৃত কফিল উদ্দিন সরদার একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন এবং মাতা মৃত শরিফাতুন্নেছা ছিলেন গৃহিণী। শামসুর রহমান সাহেব ব্যক্তি জীবনে চার পুত্র ও তিন কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। বড়পুত্র খুরশিদুল ইসলাম ও মেঝপুত্র মশিউল আযম উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ব্যবসা করছেন। সেজ পুত্র ডাক্তার শরিফুল ইসলাম আমেরিকা প্রবাসী এবং ছোট পুত্র মেজর মেসবাহুল ইসলাম। তিন কন্যার মধ্যে মাহমুদা শিরিন ও হুমায়রা পারভীন দেশে এবং বড় কন্যা ফিরোজা বেগম লন্ডনে বসবাস করেন। পরিবারের সকলেই ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত রয়েছেন। তাঁর শিক্ষা জীবনটা ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে সুদুর খুলনা মহাকুমার প্রত্যন্ত গ্রাম মঠবাটি থেকে কপোতাক্ষের বুক চিরে নৌকা যোগে কলকাতা শহরে যেতেন। প্রায় ৬ মাস পর আবার নৌকা যোগে বাড়ি ফিরতেন। এভাবে তিনি কলকাতায় উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। ঐ সময়ে কয়েক জন স্নাতক ডিগ্রিধারী লোক পূর্ববঙ্গে মুসলিম সমাজে ছিল, তার মধ্যে তিনি অন্যতম। খুলনার ১৪২, স্যার ইকবাল রোডে মুসলিম আর্ট প্রেস নামক একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। এছাড়া তিনি তাওহীদ স্টেশনারী মার্ট নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৪৯ সাল থেকে তিনি সাংবাদিকতা পেশায় কাজ শুরু করেন। ৫০-এর দশকে তিনি নগরীর আলতাপোল লেন থেকে তাওহীদ পত্রিকা প্রকাশ করতেন। এরপর তিনি সাপ্তাহিক তাওহীদ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে ইসলামের বিরুদ্ধে যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছেন। ১৯৫২ সালে তাওহীদ পত্রিকাটিকে জামায়াতের মুখপাত্র হিসেবে কাজে লাগান। ঐ সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে একটি রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ায় তৎকালীন সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ মাঠে নামে। গোয়েন্দা বিভাগ জানতে পারে যে, ঐ পত্রিকাটির সাথে শামসুর রহমান সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। তখন প্রশাসন তাকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে তারপরও বেশ কিছুদিন পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত রাখেন। ২০০৩ সালে খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি তার জীবনের এমন একটি ঘটনা প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিকতায় রাষ্ট্রীয় প্রতিবন্ধকতা যুগে যুগে ছিল, এখনও আছে এবং থাকবে কলম যোদ্ধারা সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এগিয়ে যাবে। তিনি জানা সরকারি নিপীড়ন থেকে তিনি রক্ষা পাননি। তার ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রেসটিও তৎকালীন সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন বাধ্য হয়ে তিনি পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় যোগ দেন। একজন সুলেখক হিসেবে তিনি যথেষ্ট পরিচিতি লাভ করেন। অবজারভার এবং এসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তান (এপিপি)র সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫৮ আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের পর ১৯৫৯ সালে তার নেতৃত্বে খুলনা প্রেস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন শহরের মির্জাপুরস্থ জহুরুল হক সরদারের (সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মৃত্যু ১১ আগষ্ট ১৯৯০ইং) বাড়ীতে শামসুর রহমানকে সভাপতি ও জহুরুল হক সরদারকে সেক্রেটারি করে খুলনা প্রেসক্লাবের প্রথম কমিটি গঠন করা হয়। ঐ কমিটিতে ছিলেন এমন দু’জনের নাম জানা গেছে, তারা হলেন এম এস ওয়ার্সী ও সৈয়দ সা’দ আলী। ক্লাবের সূচনালগ্নে শামসুর রহমান দৈনিক ইত্তেহাদ, জহুরুল হক সরদার সংবাদ সংস্থা ইউপিপি, সৈয়দ সা’দ আলী আজাদ, এম এস ওয়ার্সী মর্নিং নিউজের খুলনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। শামসুর রহমান খুলনা প্রেসক্লাবের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাবিবুর রহমান ৫৯ সালে খুলনা সফরে আসেন। তার সফরসূচিতে প্রেসক্লাব পরিদর্শন অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু খুলনাতে তখন কোন প্রেসক্লাব না থাকায় সাংবাদিকরা জহুরুল হকের বাড়িতে এক সভায় মিলিত হন এবং প্রেসক্লাব গঠন করেন। তবে প্রেসক্লাব গঠনের সঠিক মাস ও তারিখ জানা না গেলেও ঐ বছরের মধ্যবর্তী সময়ে প্রেসক্লাব গঠন করেন। (প্রেসক্লাব গঠনের সঠিক মাস ও তারিখ জানা না গেলেও ঐ বছরের মধ্যবর্তী সময়ে প্রেসক্লাব গঠন করা হয়েছিল বলে প্রথম সভাপতি শামসুর রহমান নিশ্চিত করেছিলেন।) জহুরুল হক সরদারের বাড়ির একটি কক্ষে প্রেসক্লাবের প্রথম কার্যালয়ের কাজ শুরু হয় বলেও শামসুর রহমান ওই সময় জানিয়েছিলেন। যে কারণে বর্তমান প্রজন্মের সাংবাদিকরা মনে করেন খুলনার সাংবাদিকতা ও প্রেসক্লাবের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে শামসুর রহমানের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ শামসুর রহমান সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে খুলনার প্রবীণ সাংবাদিক ও খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মনিরুল হুদা বলেন, তিনি একটি রাজনৈতিক আদর্শের বিশ্বাসী হলেও তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের মাঝে। সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে ফুল টাইম রাজনীতিবিদ হয়েও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাংবাদিকদের সাথে ছিল তার গভীর সম্পর্ক। যে কারণে খুলনার সাংবাদিক সমাজ তাকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। সাংবাদিকতা শেষ করতে না করতেই তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি জামায়াতের রুকন হন এবং ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৩ বছর খুলনা জেলা শাখার আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ১৯৬২ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ৪ বছর খুলনা বিভাগের সেক্রেটারি ও ১৯৮৩ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ২০ বছর জামায়াতের নায়েবে আমীর হিসেবে এবং দারুল ইসলাম

IT Amadersomaj