আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকের পোষ্ট দেখে হয়তো উইন্ডোজ ব্যবহারকারীরা আমার উপর ক্ষেপে যেতে পারেন। তবে আপনাদের ক্ষেপানোর উদ্দেশ্যে এই পোস্ট না। আমাদের মধ্যে অনেকেরই পিসির কনফিগারেশন তেমন ভালো নয়। যার ফলে উইন্ডোজ ভালোভাবে চলে না। ল্যাগ + হ্যাং তো আছেই। আর আমরা বেশিরভাগই যে উইন্ডোজ ব্যবহার করি তা হচ্ছে ক্র্যাক ভার্সন। যাতে ভাইরাস, র্যান্সমওয়্যার, ম্যালওয়ারের ভয় তো রয়েছে। লিনাক্স সম্পর্কে বলার আগে জেনে নিন কাদের জন্য লিনাক্স ব্যবহার করা উচিত আর কাদের উইন্ডোজ।
কাদের লিনাক্স এ আসা উচিত না:
যদি আপনি উইন্ডোজের সাথেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত এবং জেনুইন উইন্ডোজ ব্যবহার করছেন তাহলে আপনার লিনাক্সে আসার তেমন কোনো দরকার নেই। যদি আপনার সব কাজ উইন্ডোজ রিলেটেড বা আপনি এডোবির সফটওয়্যার ব্যবহার করেন যেমনঃ ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর তাহলে আপনার লিনাক্সে আসা উচিত না। কারণ এডোবির সফটওয়্যার আপনি লিনাক্সে পাবেন না আর ফটোশপের একদম সরাসরি বিকল্প তেমন নেই লিনাক্সে। এছাড়া গেমার যারা রয়েছেন তাদেরকেও লিনাক্স এ আসার পরামর্শ আমি দিবো না। যদিও লিনাক্সে গেম আপনি খেলতে পারবেন কিন্তু একটু ঝামেলা পোহাতে হবে।
যাদের লিনাক্সে আসা উচিতঃ
যদি আপনি উইন্ডোজ ক্র্যাক করে ব্যবহার করেন এবং নেট ব্রাউজিং, টাইপিং এসব ছাড়া তেমন কোনো কাজ নেই তাহলে লিনাক্সে আসতে পারেন আপনি। আপনি যদি প্রফেশনাল কাজও করেন যেমনঃ ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, প্রোগ্রামিং তাহলে লিনাক্সে আপনাকে স্বাগতম। অথবা আপনার পিসি অনেক পুরনো তাতে উইন্ডোজ এ অনেক ল্যাগ করে। তো তাহলেও লিনাক্সে আসতে পারেন আপনি।
লিনাক্স সম্পর্কে আমি বেশি ডিটেইলস এ যাবো না এই পোষ্ট এ। লিনাক্স হচ্ছে একটি কার্নেল। আর এটি ওপেন সোর্স হওয়ার কারণে এটাকে ব্যবহার করে অনেক ডিস্ট্রো তৈরি হয়েছে। কার্নেলকে আপনারা একটি গাড়ির ইঞ্জিনের সাথে তুলনা করতে পারেন। যেভাবে ইঞ্জিন দিয়ে একটি গাড়ি তৈরি করা হয়, তার বডি ডিজাইন করা হয়, বিভিন্ন ফিচার যুক্ত করা হয় ঠিক তেমনি লিনাক্স কার্নেলের সাথে প্যাকেজ ম্যানেজার, ডেস্কটপ এনভাইরনমেন্ট ইত্যাদি যুক্ত করে একটি পরিপূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা হয়। কেউ সর্বপ্রথম লিনাক্সে আসতে গেলে তাকে প্রথম যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা হচ্ছে ডিস্ট্রো নির্বাচন করা। লিনাক্স ওপেনসোর্স কার্নেল হওয়ার কারণে একে ঘীরে হাজারের মতো ডিস্ট্রো তৈরি হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ডিস্ট্রো কোনটা তা নিয়ে অনেকে কনফিউশন এ থাকেন। তো চলুন এই সমস্যাটি দূর করা যাক।
লিনাক্সে হাজারের মতো ডিস্ট্রো থাকলেও মূল যেসব ডিস্ট্রো রয়েছে তা হচ্ছে, Debian, Red Hat, Arch Linux, Alpine Linux, Ubuntu, OpenSUSE, Gentoo ইত্যাদি। এমনকি আমরা যে এন্ড্রোয়েড ফোন ব্যবহার করি তাও লিনাক্স কার্নেলের উপর বেসড।
সবচেয়ে পপুলার হচ্ছে Debian (ডেবিয়ান)। Debian এর নিজস্ব প্যাকেজ ম্যানেজার রয়েছে যার নাম apt (Advanced Package Tool)। বেশিরভাগ পপুলার লিনাক্স ডিস্ট্রো ডেবিয়ানের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা। যেমনঃ উবুন্টু, কালি লিন্যাক্স ইত্যাদি। উবুন্টু মূলত ডেবিয়ানের উপর বেসড এবং অনেক ফিচারযুক্ত। বিগেনারদের জন্য এটা একটি পারফেক্ট চয়েজ হতে পারে কিন্তু তারপরও কিছু কারণের জন্য আমি এটা রিকমেন্ড করবো না। তাহলে লিনাক্সে যারা নতুন তারা কোন ডিস্ট্রো ব্যবহার করবে? এর উত্তরে আমি একটি ডিস্ট্রোর নাম বলবো। তা হচ্ছে Linux Mint।
লিনাক্স শেখার জন্য একদম পার্ফেক্ট ডিস্ট্রো এটি। উবুন্টু এর লেটেস্ট ভার্শনের উপর ভিত্তি করে এই ডিস্ট্রো। এর রয়েছে নিজস্ব ডেস্কটপ এনভাইরনমেন্ট Cinnamon যা অনেকটা উইন্ডোজের মতোই। তাই উইন্ডোজ থেকে যারা শিফট হবেন তাদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। আর উবুন্টু বেসড হওয়ায় এতে সফটওয়্যার সাপোর্ট ও বেশি পাবেন আপনি। তাই যারা নতুন লিনাক্সে শিফট হবেন তাদের জন্য একদম পার্ফেক্ট ডিস্ট্রো এটা।
এরপর আসি Arch Linux এ। এটি মোটেও বিগেনারদের জন্য নয়। বরং যারা লিনাক্সের সাথে পরিচিত এবং আপনি চাচ্ছেন নিজের মতো করে পুরো লিনাক্স সেটআপ করবেন তাদের জন্য Arch Linux । এটি মূলত জনপ্রিয় এর কাস্টমাইজেশনের কারণে। এতে আপনি প্রচুর পরিমাণে কাস্টমাইজেশন করতে পারবেন তাই বেশিরভাগ এডভান্স লিনাক্স ব্যবহারকারীরা Arch Linux ব্যবহার করে থাকেন। যদিও অন্যান্য লিনাক্স ডিস্ট্রো চাইলে আপনি কাস্টমাইজ করতে পারবেন কিন্তু Arch Linux এর কাস্টমাইজেশন অপশন একদম নেক্সট লেভেলে। আর এটি ইন্সটল করার জন্য কোনো গ্রাফিকাল ইন্সটলার নেই। কমান্ডের মাধ্যমে আপনাকে পুরো সিস্টেম, কার্নেল, ডেস্কটপ এনভাইরনমেন্ট ইত্যাদি ইন্সটল করতে হবে। তবে Arch Linux বেসড কিছু ডিস্ট্রো রয়েছে যারা গ্রাফিকাল ইন্সটলার দিয়ে থাকে। যেমনঃ Endeavour OS, Manjaro, ArcoLinux, Garuda Linux ইত্যাদি। তবে যারা লিনাক্স সম্পর্কে তেমন ভালো জানেন না তাদের জন্য এটি মোটেও রিকমেন্ডেড না। Arch Linux এর প্যাকেজ ম্যানেজার হচ্ছে Pacman । এর সফটওয়্যার সাপোর্ট ও খুবই ভালো। যাইহোক এটা নিয়ে কথা বলা বাদ দেই যেহেতু নতুন লিনাক্স ব্যবহারকারীদের জন্য এই পোষ্টটি করা। তবে যদি কেউ চান Arch Linux ইন্সটল এবং এর কাস্টমাইজেশনের উপর পোষ্ট তাহলে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।
তো ধরুন আপনি ঠিক করলেন লিনাক্স ইন্সটল দিবেন এবং ডিস্ট্রো হিসেবে Linux Mint বা Ubuntu সিলেক্ট করলেন। কিন্তু এখন প্রশ্ন হয়তো থাকতে পারে যে আমি মাইক্রোসফট অফিসে কাজ করি উইন্ডোজে, লিনাক্সে তা করতে পারবো কিনা অথবা লিনাক্সে বাংলা টাইপ করতে পারবো কীনা? তো এর উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ অবশ্যই পারবেন। লিনাক্সে মাইক্রোসফট অফিস নেই কিন্তু এর বিকল্প হচ্ছে LibreOffice। এটির ইন্টারফেজ ও মাইক্রোসফট অফিসের মতোই এবং মাইক্রোসফট অফিসের সকল ডকুমেন্টও এটায় সাপোর্ট করে। তাই এ নিয়ে আপনাকে কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না। আমি নিজেও এই পোষ্ট LibreOffice Writer এ লিখছি। আর বাংলা টাইপ করার জন্য OpenBangla Keyboard ব্যবহার করছি। অর্থাৎ লেখালেখির কাজ আপনি লিনাক্সে খুব ভালোমতোই করতে পারবেন। গেমিং এবং দুই একটা কাজ যেমনঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন, অটোক্যাড এসব ছাড়া প্রায় সবই আপনি লিনাক্সে করতে পারবেন। আর লিনাক্সে থাকার ফলে আপনার কম্পিউটারটি সুরক্ষিত থাকছে। যদিও লিনাক্সে ভাইরাস নেই এই কথাটি ভুল তবে তুলনামূলক অনেক কম ভাইরাস রয়েছে। আর যেসব কম্পিউটারে উইন্ডোজ ঠিকমতো চলে না সেসকল কম্পিউটারে লিনাক্স খুব ভালোভাবেই চালাতে পারবেন আপনি এবং সকল মডার্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারবেন। যারা নিজেদের প্রাইভেসি নিয়ে সচেতন তাদের জন্যও লিনাক্স একদম পার্ফেক্ট অপশন। উইন্ডোজের একটি কমন সমস্যা হচ্ছে তাদের Bloatware । উইন্ডোজ ইন্সটল দিলে বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ও ইন্সটল হয়ে যায় যা আনইন্সটল ও করা যায় না। এসব সফটওয়্যার শুধু শুধু আপনার ডিস্ক এর জায়গা অপচয় করে এবং বেশিরভাগ সময়ে ব্যাগগ্রাউন্ডে রানিং থাকে। ফলে র্যাম খরচ হয় অনেক বেশি। কিন্তু লিনাক্সে এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না আপনাকে। আপনি আপনার ইচ্ছেমত সফটওয়্যার ইন্সটল এবং আনইন্সটল দিতে পারবেন।
তো যাইহোক অবশেষে পিসি আপনার, সিদ্ধান্তও আপনার। আপনার যদি উইন্ডোজ ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই উইন্ডোজ ব্যবহার করবেন। কেউ আপনাকে বাধা দিবে না। আর যদি আপনি নিজের কম্পিউটারের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চান তো লিনাক্সে আসতে পারেন।
ধন্যবাদ।