খুলনায় চাঞ্চল্যকর শামীমা হত্যা মামলার পলাতক প্রধান আসামী সাইদুর সহ গ্রেফতার ৩

লেখক: Amadersomaj
প্রকাশ: ১২ মাস আগে


ক্রাইম ডেস্ক: কেএমপি’র হরিণটানা থানা পুলিশ চাঞ্চল্যকর শামীমা হত্যা মামলার পলাতক প্রধান আসামী মোঃ সাইদুর রহমান সহ ০৩ জনকে গ্রেফতার করেছে হরিণটানা থানা। পরে আসামীদের আদালতে তোলা হলে  ধর্ষণ করার পর ভিকটিমকে হত্যা করার দায় স্বীকার করে।

পুলিশ সুত্রে জানা যায়, খুলনা জেলার কয়রা অঞ্চলের আইলা এবং সিডর বিদ্ধস্থ এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠির একজন সদস্য বাবুল সানা। অভাবের তাড়নায় হত-দরিদ্র অবস্থায় ছেলে এবং মেয়ের হাত ধরে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে খুলনার হরিণটানা থানার রায়েরমহল এলাকায় এসে ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। শুধুমাত্র সংসারের অভাবের কারনে সন্তান দুটির মুখে দুই বেলা দুইমুঠো ভাত তুলে দিতে না পেরে শিক্ষা বঞ্চিত অবস্থায় তার কন্য শামিমা আক্তারকে সাইদুর রহমান নামক একজন পাষন্ডের নিকট বিবাহ দেন পিতা বাবুল সানা। কিন্তু মাত্র ০৫ (পাঁচ) মাসের দাম্পত্য জীবনের ব্যবধানে পাষন্ড সাইদুরের হাতে নির্মম ভাবে খুন এবং ধর্ষনের শিকার হয় শামিমা আক্তার।

দিনটি ছিলো ০৩ জুলাই ২০২৩ তারিখ। পারিবারিক কলহের জেরে মেয়ের উপর স্বামীর উপর্যপুরি নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাবুল সানা মেয়েকে নিয়ে আসেন তার বসত বাড়িতে। এ বিষয়ে বাবুল সানার পরিবারের সংগে শামিমার স্বামী সাইদুর রহমান এর পরিবারের বাক বিতন্ডা হয়। যার ফলে ক্রমান্বয়ে ক্ষোভ রাগ ঘৃনা এবং প্রতিশোধের আগুন জন্মাতে থাকে সাইদুরের মনে। সাইদুর পূর্ব থেকেই নেশাগ্রস্থ ছিলো। সে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগিদের সাথে পরিকল্পনা আটতে থাকে। যার প্রেক্ষিতে গত ০৪ জুলাই ২০২৩ খ্রিঃ তারিখে রাত অনুমান ০৯.৩০ ঘটিকায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সহযোগি সোহাগকে নিয়ে সে হাজির হয় বাবুল সানার বসত বাড়িতে। কৌশলে নিজের অভিনয়কে কাজে লাগিয়ে শামিমা আক্তারের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে সামান্য একটি মোবাইল ফোন এবং একটি বোরকা কিনে দেওয়ার জন্য প্রলু্ব্ধ করে। শামিমার কোমলমতি মন স্বামীর এহেন কথায় গলে যায়। সে তাকে বিশ্বাস করে, ক্ষমা করে এবং অভাবের কাছে হার মেনে মোবাইল ফোন এবং বোরকা পাওয়ার আশায় নতুন করে সংসার সাজিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন চোখে নিয়ে স্বামীর হাত ধরে বয়রা বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্তু গন্তব্যে পৌছানোর আগেই হরিণটানা থানাধীন আন্দিরঘাট ব্রিজের নিকট ভ্যান থামিয়ে পাশ্ববর্তি কাশবনের জঙ্গলে নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক তার উপর হামলে পড়ে সাইদুর রহমান। সে শামিমাকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে শারীরিক মেলামেশায় বাধ্য করে। ইতিমধ্যে ঘটনা স্থলে পৌছে যায় সাইদুরের সহযোগী সোহাগ এবং তপু। তারাও সাইদুরের সম্মতিতে ভিকটিম শামিমাকে পালাক্রমে ধর্ষন করে। এরপর আসে সেই অন্তিম মুহুর্ত। সহযোগী সোহাগ চেপে ধরে শামিমার দুই পা, আর তপু চেপে ধরে শামিমার দুই হাত। আর সাইদুর এই ঘটনার মাস্টার মাইন্ড, নেশাগ্রস্থ অবস্থায় তার রাগ ঘৃনা আর প্রতিশোধের আগুন নিভাতে চেপে ধরে শামিমার গলা। দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই একটি স্বপ্ন এবং একটি অপরিনত সবুজ জীবনের চির অবসান ঘটে।

পরদিন দুপুর নাগাদ হরিণটানা থানা পুলিশ খুজে পায় শামিমার মৃত দেহ। তারও একদিন পর গত ০৫ জুলাই ২০২৩ খ্রিঃ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিম ঘরে এসে উম্মাদ পিতা বাবুল সানা সনাক্ত করে তার অতি আদরের কন্যা শামিমার লাশ।

এবিষয়ে বাবুল সানার দায়েকৃত এজাহারের প্রেক্ষিতে হরিণটানা থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। হরিণটানা থানার মামল নং-০১, তারিখ০৫/০৭/২০২৩, খ্রিঃ ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড।

মামলার পর থেকেই ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং প্রকৃত আসামী গ্রেফতারের জন্য হরিণটানা থানা পুলিশ তৎপর থাকে। যারই জের ধরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কেএমপি, হরিণটানা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জনাব মোঃ শাহরিয়ার হাসান এর নেতৃত্বে একটি চৌকশ টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে গত ২১/০৯/২০২৩ খ্রিঃ বেলা অনুমান ১৬.৪০ ঘটিকায় আড়ংঘাটা থানাধীন শলুয়া বাজার এলাকা হতে চাঞ্চল্যকর শামীমা হত্যা মামলা পলাতক প্রধান আসামী মোঃ সাইদুর রহমান (২১), পিতা-মোঃ আব্দুর রহিম মোল্লা, মাতা-মোসাঃসাবিনা খাতুন, সাং-২নং কয়রা (সানাবাড়ী), থানা-কয়রা, জেলা-খুলনা কে গ্রেফতার করেন। আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে নিজের সম্পৃক্ততা সহ সে জানায় হত্যাকান্ডের সাথে আসামী ২) মোঃ সোহাগ মোল্লা (২০), পিতা- জামাল মোল্লা, সাং-রায়ের মহল, মন্দিরের মোড়, এবং ৩) মোঃ শরিফুল ইসলাম তপু (২৬), পিতা- মোঃ মকিতুর রহমান, সাং- আব্দুল মালেক রোড, রায়ের মহল পশ্চিমপাড়া, উভয় থানা- আড়ংঘাটা, জেলা- খুলনা দ্বয় প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিল। আসামী মোঃ সাইদুর রহমান এর স্বীকারোক্তি মতে আসামী ২) সোহাগ মোল্লা এবং ৩) শরিফুল ইসলাম তপু কে ২২/০৯/২০২৩ খ্রি: বেলা ১০.৩০ ঘটিকায় রায়ের মহল এলাকা থেকে অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করা হয়।

উল্লেখ্য যে, মামলা রুজুর পর থেকে আসামীরা পলাতক ছিল। হত্যার ঘটনা সংক্রান্তে মামলার প্রধান আসামী মোঃ সাইদুর রহমান হত্যার দোষ স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছে। মামলা তদন্ত অব্যহত আছে।

বর্নিত ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক এবং আবহমান বাংলার চির পরিচিত নারী জীবনের হৃদয়বিদারক চিত্র । আমরা ঘটনার বিষয়ে অত্যন্ত মর্মাহত। আমরা আর কোন পিতা মাতার বুক খালি হোক সেটা চাই না, আর কোন নারীর জীবনের এমন পরিনতি হোক সেটা কামনা করি না। সেই সাথে আমরা সমাজজীবনে নেশার বিস্তার প্রতিরোধে এবং পারিবারিক কলহ নিম্পত্তিতে সকলের অবদান এবং অংশ গ্রহনের আহবান জানাই।



Source link

IT Amadersomaj