রাণীনগরে যৌতুকের দাবিতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে

লেখক: Amadersomaj
প্রকাশ: ১ বছর আগে


আওরঙ্গজেব হোসেন রাব্বী, স্টাফ রিপোর্টার: নওগাঁর রাণীনগরে ৩ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে বেদম মারপিট করে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মজিদ আকন্দের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের পর দ্বিতীয় স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উপজেলার একডালা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে।

অভিযুক্ত আব্দুল মজিদ আকন্দ উপজেলার একডালা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ঘটনার পর থানায় গেলে মজিদ আকন্দ প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি পুলিশ। বাধ্য হয়ে রবিবার (১৬ জুলাই) নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার একডালা ইউপির রাজাপুর গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দীনের মেয়ে দুই সন্তানের জননী শিউলী বিবির প্রথম স্বামী ভালো না হওয়ার কারণে প্রায় ৫ বছর আগে স্বামীকে তালাক দিয়ে দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাবার বাড়ি এসে বসবাস করতেন। জীবিকার তাগিদে বাড়িতেই কাপড় সেলাইয়ের কাজ করে আসছিলেন তিনি। সেলাইয়ের কাজ প্রসারের আশায় শিউলী রাজাপুর গ্রামের মোড়ে ফুফাতো ভাই আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মজিদ আকন্দের মার্কেটে গত বছর একটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে কাপড় সেলাইয়ের কাজ করতে থাকেন। কিছুদিন পর স্থাণীয় কিছু বখাটে শিউলীকে কু-প্রস্তাব দেওয়া শুরু করে। এরপর শিউলী বিষয়টি আব্দুল মজিদ আকন্দকে জানালে তাকে বিয়ে করে মাথার উপর ছাতা হওয়ার বিভিন্ন প্রলোভন দেয় মজিদ।

শিউলী বিবি জানান, চলতি বছরের ২০ ফেব্রæয়ারি মুসলিম শরীয়ত মোতাবেক ১ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে মজিদ আমাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর মজিদ নানা কৌশলে আমার সঞ্চয় করা প্রায় ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে মজিদ তার ১ম স্ত্রী, মেয়ে, জামাই, ভাই ও ভাতিজাদের কুপরামর্শে আমার কাছ থেকে আরও ৩ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে দাবি করেন। এরপর তার দাবিকৃত টাকা আমি দিতে না চাইলে মজিদ আকন্দ আমার সঙ্গে আর সংসার করবে না বলে চলতি মাসের ৫ তারিখ বিকেলে মজিদসহ অন্যরা সবাই মিলে আমাকে মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে আমি স্বামীর বাড়ি থেকে কোন রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে বাবার বাড়িতে ফিরে আসি।

তিনি আরও বলেন, ওই ঘটনার পর ৯ জুলাই মজিদ গোপনে তালাক নামা আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। তালাক নয় সংসার করার জন্য আমিসহ মা ও অন্যরা মজিদের বাড়িতে যাই। পরবর্তীতে ১২ জুলাই আমার বাবার বাড়িতে সন্ধ্যায় মজিদ আকন্দসহ অন্যদের নিয়ে বসলে যৌতুক ছাড়া মজিদ আকন্দ আমার সঙ্গে সংসার করবে না বলে পরিবারের সদস্যদের জানায়। এমন পর্যায়ে যৌতুকের দাবিকৃত ৩ লাখ টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মজিদ আকন্দসহ অন্যরা লাঠিসোটা দিয়ে আমাকে মারপিট করে নির্যাতন করেন।

এতে আমি গুরুত্বর আহত হলে স্বজনরা আমাকে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরে চলতি মাসের ১৫ তারিখে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করতে ব্যর্থ হলে ওইদিন বিকেলে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা গ্রহণ করেনি। বাধ্য হয়ে পরদিন ১৬ তারিখে মজিদ আকন্দকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করি। আমি আমার উপরে চলা অমানবিক নির্যাতনের সুষ্ঠ বিচারের দাবি করছি।

শিউলির মা জিন্নাতুন বেওয়া বলেন, মজিদ আকন্দ বিভিন্ন প্রলোভনে আমার মেয়েকে বিয়ে করতে বাধ্য করে। পরবর্তীতে মজিদ নিয়ম মাফিক আমাদের সাক্ষী করে কাজীর মাধ্যমে আমার মেয়েকে বিয়ে করেছে। বিনা কারণে মজিদ আকন্দ আমার মেয়েকে নির্যাতন করেছে। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই। আর গোপনে দেওয়া মজিদের তালাকনামা আমরা মানি না। যৌতুক ছাড়াই আমার মেয়ে মজিদ আকন্দের ঘর সংসার করবে এই আশায় আমরা আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। আশা করছি আমরা সুষ্ঠ বিচার পাব।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আব্দুল মজিদ আকন্দ বলেন, যৌতুকের দাবিতে শিউলীকে মারপিট করার যে অভিযোগ তা সম্পন্ন মিথ্যে ও বানোয়াট। আমি তাকে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু নানা কারণে আমি সম্প্রতি তাকে তালাক দিয়েছি। সে এখন আর আমার স্ত্রী নয়। আমি তার সঙ্গে আর ঘর সংসার করতে চাই না।

এ ব্যাপারে রাণীনগর থানার ওসি আবুল কালম আজাদ বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ বা মামলা করতে কেউ থানায় আসেনি এবং ঘটনাটি জানায়নি। আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর আদালতে যদি মামলা করে থাকে তাহলে আদালতের নির্দেশনা মেতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



Source link

IT Amadersomaj