সীমিত আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস; যশোরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম, সপ্তাহে ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৮ টাকা

লেখক: Amadersomaj
প্রকাশ: ৮ মাস আগে


রিফাত আরেফিন : সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও ফের অস্থির হয়ে উঠেছে যশোরে চালের বাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে যশোরে সব ধরনের চাল কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে প্রকারভেদে দুই থেকে আট টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে কেজিপ্রতি চাল বিক্রি হচ্ছে। এতে সাধারণ ক্রেতারা যেমনি হতবাক হচ্ছেন, তেমনি বিক্রেতারাও কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে মিল মালিক ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

যশোরের পাইকারি চালের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে। আর অপেক্ষাকৃত মোটা ব্রি-২৮ চাল ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে কেজিপ্রতি নাজিরশাইল চালের দাম মানভেদে ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকা ও সুগন্ধি আতপ চালের দাম ৯০ টাকা কেজি। এ দুই ধরনের চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।

যশোর বড়বাজার চালপট্টির পাইকারি বিক্রেতা অমল কুমার সাহা জানান, সদ্যসমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় পর্যন্ত প্রকারভেদে মিনিকেট চাল বিক্রি করেছেন প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৪৯ টাকায়। এরপর এক সপ্তাহের মধ্যে দাম বেড়ে ৬৫ টাকা পর্যন্ত ওঠে। অপেক্ষাকৃত মোটা ব্রি-২৮ চালের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। এই চালের দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় পাঁচ টাকা।

যশোর বড়বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী প্রদীপ কুমার জানান, নাজিরশাইল ও সুগন্ধি আতপ চাল সাধারণত উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের জন্য। ফলে বাড়তি দামের কষাঘাত সহ্য করতে হচ্ছে শুধু নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষকেই।

খুচরা চাল বিক্রেতা যশোর শহরের এইচএম রোডের তৃণা স্টোরের প্রোপাইটর আবদুল আজিজ জানান, দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চালের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজিতে তিন-চার টাকা করে দাম বেড়েছে।

যশোর বড়বাজারের চাল ব্যবসায়ী সোহেল হোসেন জানান, গত বছর দেশে কোনো বন্যা হয়নি। ছিল না কোনো খরা। পরিবেশ অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনও হয়েছে আমন ধানের। কৃষকের ঘরে এখন গোলাভর্তি নতুন আমন ধান। তবুও চালের দাম বেড়েই চলেছে।

যশোরের খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা সাখাওয়াত, ইসহাক, পরিতোষ, চিত্তরঞ্জন সাহা জানান, দেশে প্রচুর চাল মজুদ রয়েছে। এখন দেশে কোনো বন্যা, খরা, রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় এ খাদ্যদ্রব্যটির দাম বেড়েই চলছে। এর জন্য মিল মালিক ও আড়তদাররাই দায়ী বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন।

যশোর খাজুরা বাজারের কয়েকজন চালের আড়তদার অভিযোগ করেন, মিল গেট থেকেই বেশি দামে তাদের চাল কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করা ছাড়া তাদের উপায় নেই। এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু মিল মালিকদের দায়ী করছেন তারা।

আবজাল হোসেন নামে এক চাল ব্যবসায়ী জানান, বাংলাদেশে চালের ঘাটতি রয়েছে। আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদেশ থেকে চাল আমদানি হচ্ছে না। আমদানিকারকরা আগ্রহ হারিয়েছেন। সরকারিভাবে দেরিতে চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এ জন্য বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্রতি বছরই এ সময়ে চালের দাম বাড়ে। সামনে বোরো ধান না উঠা পর্যন্ত চালের দাম কমাবেন না মিল মালিকরা। নতুন সরকার গঠনের পর বলা হচ্ছিল খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে চালের দাম কমানো হবে। কিন্তু বাজারে তার সামান্যতম প্রতিফলন দেখছেন না। সামনে কমবে বলে মনেও হচ্ছে না।

খাজুরা বাজারের মিল মালিক রহমান মোল্লা জানান, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের দাম বাড়াতে হয়েছে। এখন বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসায় তারাও দাম কমাতে শুরু করেছেন। তবে খুচরা বাজারে চালের বাড়তি দামের জন্য পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের দায়ী করেন তিনি। যে অজুহাতেই হোক, দাম যে হারে বেড়েছে, সেই হারে কমেনি। ফলে চালের বাজার সহসা আগের অবস্থায় ফিরবে বলে মনে হচ্ছে না।

যশোর বড়বাজারে চাল কিনতে আসা আকরামুজ্জামান নামে এক চাকরিজীবী জানান, এ সময় চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। এর পেছনে কারও না কারও কারসাজি রয়েছে। সরকার এদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিলেই দাম আগের অবস্থায় চলে আসবে। চালের সংকট না থাকায় এখনই চাল আমদানিতে উৎসাহিত করতে আমদানি শুল্ক কমানো ঠিক হবে না। কারণ যারা বাজারে কারসাজি করছে তারাই অপেক্ষায় রয়েছে এ সুযোগ নেওয়ার জন্য। কেননা কম শুল্কে বিদেশি চাল দেশের বাজারে ঢুকলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

সরজমিনের যশোরের বড় বাজার চালের পাইকারী বাজার ঘুরে জানা গেছে, কাজল লতা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা, আগে ছিল ৫২ টাকা, মিনিকেট চাল ৬২ থেকে ৬৫ টাকা, আগে ছিল ৫৪ টাকা, স্বর্ণলতা চাল ৫৫ টাকা থেকে ৫৮ টাকা, আগে ছিল ৪৮ টাকা, বাসমতি চাল ৬৮ টাকা থেকে ৭৩ টাকা, আগে ছিল ৬৬ টাকা। প্রতি ২৫ কেজির চালের বস্তায় দাম বেড়েছে ৬০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা করে।

বড়বাজারের খুচরা চাউলের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, বস্তাপ্রতি ৬০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে সবধরনের চালের দাম। আমাদের আড়ৎ ব্যবসায়ীরা বলছেন ধানের দাম বাড়ার কারণে চালের দাম বেড়েছে।

তাপস কুমার কুন্ডু নামে আরেক চাল ব্যবসায়ী বলেন, আড়ৎদাররা দাম বাড়িয়ে আমাদের কাছে বিক্রি করে এজন্য আমরা বেশি দামে বিক্রি করছি। তারা বলছে পোকায় ধান ক্ষেত নষ্ট হওয়ার কারণে ধানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, এজন্য চাউলের দামও বেড়েছে।

শহরের বেজপাড়া থেকে বড়বাজারে চাল কিনতে আসেন দিনমজুর ইব্রাহিম হোসেন। তিনি বলেন, ‘শাক-সবজির দাম বাড়লে দুইদিন ডাল ভাত খেয়ে থাকা যায়, কিন্তু চাউলের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে কোন এক সময় ভাত না খেয়ে থাকতে হবে।’

শহরের চুয়াডাঙ্গা বাস্টান্ডের এক দোকান থেকে চাল কিনে ফিরছিলেন মনোয়ারা নামে এক পরিছন্ন কর্মী। তিনি বলেন, আমরা দিন এনে দিন খাই, দ্রব্য মূল্যের দাম বৃদ্ধি পেলে আমরা হাড়ে হাড়ে এর যন্ত্রণা টের পাই। তিনি বলেন ‘অনেকবার পেপারে, সাংবাদিকদের লেখালেখি করতে দেখেছি, কিন্তু দিন শেষে কিছুই হয় না।’

IT Amadersomaj