[ad_1]
কোনোকিছুতেই যেন মন বসতে চায় না, মনোযোগ শুধু অন্য দিকে চলে যায়। হয়তো পড়তে বসেছেন, হঠাৎ কেউ মেসেজ দিল, বা ফেবু থেকে একটা নোটিফিকেশন এল, বা পড়ার দরকারেই ইউটিউবে ঢুকলেন, তারপর কয়েকঘন্টা একনিমিশে কিভাবে যে পার করলেন সেটা নিজেও বুঝে উঠেন না। আপনি চান কিছু করতে, কাজকর্মে অগ্রসর হতে কিন্তু সেগুলো যেন এগোতেই চায় না। একটু খেয়ালী আর বিশ্লেষণী চোখে দেখলেই কিন্তু এসবের গোড়ার সমস্যা বের করা যায়। আসুন দেখি বের করতে পারি কিনা।
বার বার হাই আসছে? চোখে ঘোলা দেখছেন? চোখের পাতা ঘুমের আবেশে লেগে আসছে? আপনি সম্ভবত আসলেই ক্লান্ত। একনাগাড়ে অনেকক্ষন একজায়গায় বসে কাজ করতে থাকলে এমন হয়। ক্লান্ত শরীরে কাজকর্ম আরো ধীর গতিতে আগায় 🐢
ব্রেইন কাজ করতে করতে এক সময় ক্লান্ত হয়ে যায়, তখন তার বিশ্রাম লাগে। বিশ্রাম শরীরের দূষিত পদার্থগুলো বের করে দেয় ও শরীরকেও রিস্টার্ট দেয়। কিন্তু আপনি যদি ব্রেইনকে সে সু্যোগ না দেন তখন সে কি করবে? তখন ব্রেনের ক্লান্ত কোষগুলো কাজ চাপ সইতে না পেরে মারা যায়। একটু সূর্যের আলোও জরুরী, শরীরের কোষগুলো পুনরুজ্জীবিত করতে প্রাকৃতিক আলো সাহায্য করে ভালো।
পূর্ণবয়স্ক মানুষের ৮-১০ ঘন্টা ঘুম জরুরী, এর কম-বেশি হলে শরীর ঠিকমতো রুটিনের সাথে তাল মিলাতে পারে না। আমার এক বন্ধু আছে সে বিকাল বেলা একটু না ঘুমালে বাকি সময় পুরোটা মাথা ব্যাথা করে। সারারাত ঘুমাক না ঘুমাক, বিকালে তার একটু ঘুমাতে হবেই হবে। বুঝাই যাচ্ছে, তার বিশ্রামের সবচেয়ে কার্যকরী সময় ঐ বিকেলে ঘুম।
একটা মজার তথ্য দেইঃ জাপানে অফিসে কাজ করতে করতে কেউ ঘুমিয়ে গেলে তাকে জাগাতে নিষেধ করা হয়। বলা হয় যে, সে মনোযোগ দিয়ে ভালোভাবে কাজ করার ফলে তার ব্রেইন পূর্ণরূপে ব্যবহৃত হয়েছে, তাই এখন তার বিশ্রাম করা দরকার। বরং তারা ব্যাপারটাকে আরো উৎসাহিত করে। জাপানীরা ভালোই জানে। কি বলেন, জাপানের ভিসা লাগাবেন নাকি?? 😛
নরমালি আমরা খারাপ খবর শুনলে কি হয়? ব্যথিত হই 😞 এটা আমাদের মনের উপর একটা বাজে প্রভাব ফেলে। কেউ কেউ তো আবার অতি চিন্তা করে অসুস্থও হয়ে পড়ে (যেমন আমার মা 😑) ঠিক কার কথা মনে নেই, কিন্তু আমার ফ্যামিলির মধ্যেই কেউ একজন মারা যাওয়ার খবর ছোট একজনকে শোনানো হয়নি, কেন? কারন তার পাবলিক পরীক্ষা চলছিল। কাছের কারো মৃত্যু-সংবাদ শুনে তার পরীক্ষা খারাপ হতে পারে, এই ভয়ে।
তাই বলে কি কারো বিপদে দৌড় দিব না, ভাই?
দিবেন, বলছি যে ছোট-খাটো হুট-হাট দরকারে ততক্ষণাৎই দৌড়ানোর দরকার নেই। যদি ১০ মিনিট পরে হাজির হলে সমস্যা না হয় তো যা করছেন তা শেষ করে ১০ মিনিট পরেই যান।
আমি যেটা করিঃ ফোন Do not disturb এ রাখি, তবে ৩টা নাম্বার ব্যতীত, এই ৩ জন আমার একান্ত আপনজন। দুনিয়াতে যদি আমার কাউকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়, আর সবার আগে আমারই এগিয়ে যাওয়া সবচেয়ে বেশি যুক্তিযুক্ত এমন কেউ যদি থাকে তো সেটা হবে এই ৩ জন। ঠিক কিনা? এর বাইরে বন্ধুর সাথে বের হওয়া, বা স্যারের মেইলের জবাব ২০ মিনিট পরে দিলে তো কারোরই কিছু তলিয়ে যাবে না, আর তাদের do or die সিচুয়েশন হলে তো তারা আগে আমাকে ডাকবে না, আগে তাদের কাছেরজনের কাছে সাহায্য চাইবে, তাই না?
তাহলে ভালো খবরের কি খবর? ভাই, আপনি মনে করেন ১০ লাখ টাকা লটারী জিতেছেন, আপনার ভাগ্য খুলে গেছে, আপনি বড়লোক হয়ে গেছেন, আপনার কপালে এখন সুন্দরী জামাই/বউ নিশ্চিত, বহুদিনের ধার করা ৯০ টাকা অবশেষে বন্ধুকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন – অতি উত্তম। কিন্তু সংবাদটা ১০ মিনিট পরে পেলে কি খুব বেশি লস হয়ে যাবে? নাকি ১০ মিনিটের মধ্যেই ঐ ১০ লাখ নিতে না পারলে টাকাটা উড়ে যাবে? সত্যি সত্যি লটারি পেলেও তো ওরা কয়েকদিন সময় দেয় পুরষ্কার বুঝে নেয়ার জন্য।
যখন আমরা ভালো কিছু শুনি তখন ব্রেইন অ্যাড্রেনালিন লেভেল হাই হয়ে যায়, মানে শরীরে ভালো লাগা বেড়ে যায়, কিন্ত শীঘ্রই এই লেভেল স্থীতিশীল করা যায় না, তখন কাজে আর মন বসতে চায় না, শুধু ঐ ভালো কিছুর কথা মনে পড়ে।
বাস্তবে না হয় লটারি পেলে আপনি ২০ হাজারের চাকরি আর ২০ সেকেন্ডও না করলেন, কিন্তু লটারির মত নিউজ তো প্রত্যেকদিন আসে না। ছোটখাট খবরগুলোই মনোযোগ নষ্টের জন্য এনাফ।
উদাহরণস্বরূপ সেটা হতে পারে খেলার খবর, তামিম এইমাত্র কেমনে ছক্কা পিটালো আমার এখন দেখতেই হবে; হতে পারে জিএফ মেসেজ দিসে, রিপ্লাই না দিলে ব্রেকাপ।
দুই ঘটনারই কিন্তু সরল সমাধান আছে, আপনি আগেই কাজকর্ম সেরে রাখলেন আর খেলার সময় খেলা দেখলেন, আর এমন জিএফ রাখারই কি দরকার? পার্টনারের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া বাধ্যতামূলক নাহলে ঐ রিলেশন এমনিই যাবে, রিপ্লাই তো একটা উসিলা। এমন অনেক রিলেশন দেখবেন বয়সে বিস্তর ফারাক কিন্তু সংসার কাটছে সুখেই – কেবল ঐ বোঝাপড়ার জন্য। অন্যের সুবিধা না বুঝলে অন্যে আপনারটা বুঝতে যাবে কেন?
আপনার ফোন হতে পারে মাল্টিটাস্কিং কিং কিন্তু আপনার ব্রেইন না। মানুষ মাল্টিটাস্কিংয়ে পারদর্শী না – এই কথা আমি বহু আগে শুনেছি। নিজে চেস্টা করে দেখুন, আপনি চাইলেও মাথার মধ্যে একসাথে দু’টো গল্প বানাতে পারবেন না। পারবেন, কিন্তু তার চেয়ে যদি একটাতেই ফোকাস করতেন তো গল্পটার কাহিনী ভালো হতো।
আমরা কেবল এক কাজ থেকে অন্য কাজে দ্রুত শিফট করি, দুই কাজ একসাথে একই সময়ে করি না
একটা ইমেইল লিখছেন? ইমেইলটাই শেষ করুন, ইমেইল লিখতে লিখতেই কবিতা ধরবেন না। কবিতা লিখছেন? সেটাই করেন, অন্য দিকে যাইয়েন না। প্রায়োরিটি অনুযায়ী লিস্ট সেট করেন, দরকারী কাজ আগে রাখেন, Google, Microsoft – দুইজনেরই ToDo অ্যাপ আছে এগুলো করতে।
দীর্ঘকালীন কাজ হলে কয়েকটা ভাগে ভাগ করে একটা একটা করে শেষ করেন, তাহলে ঝামেলা কম হবে, কাজটাও ট্র্যাকে রাখতে সুবিধে হবে। Pomodoro technique এক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী হতে পারে।
জীবনে আমরা যা কিছু করি খানিক সুখ-শান্তির জন্যই তো করি, না? কিন্তু শান্তিটা আনতে গিয়ে যা করতে হয়, এই যেমন অফিসে যাওয়া, পড়াশোনা, ঘর ঝাড়ু, রান্নাবান্না, বা মজার কিছুই, এই ধরুন খেলায় হেরে যাওয়া – এসব কিন্তু মোটেও সুখকর নয়।
মার্ক টোয়েন বলেন, Eat the frog. এখানে তিনি বাস্তবে ব্যাঙ খেতে বলছেন না। ব্যাঙ বলতে তিনি সবচেয়ে বড় আর কঠিন কাজকে বুঝিয়েছেন। আমাদের সবারই কোনো না কোনো টার্গেট আছে জীবনে, তার জন্য দরকার পরিশ্রম। অবশ্য দরকার অনেক কিছুই, পরিশ্রম হল এমন কিছু যা প্রতিদিনই দিতে হয়, একটু একটু না করলে আগানো যায় না। আপনি সারা বছরের শ্রম একদিনে দিতে পারবেন না। এখানে গড়িমসি না করে দিনের শুরুতেই ঐ টার্গেটের জন্য কিছু করাই হল eat the frog এর ধারনা। এভাবে দিন শুরু করলে
যা-ই করুন, ধীরেসুস্থে, মনোযোগ দিয়ে আনন্দের সাথে করুন। ভাবুন এর ফল আপনি কি পাবেন, সেটা আপনার জীবনকে কতটুকু অর্থবহ করবে।
পয়েন্ট তিনে যেমনটা বলেছি, বড় কাজগুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে করেন, টুডু লিস্ট করেন, কতটুক কি করা হল তার একটা হিসাব রাখেন।
তাহলে এলোমেলো লাগবে না আর কোনটা কতটুক এগোলো বুঝতেও সুবিধা হবে।
ভালো থাকুন, যা করছেন উপভোগ করুন, লক্ষ্যের জন্য চেস্টা চালিয়ে যান, আপনার জন্য শুভকামনা 💗
[ad_2]