আবেগ নয়, চাই স্থায়ী পরিবর্তন
লোক দেখানো আবেগ নয়, চাই বাস্তব পদক্ষেপ।আছিয়ার মতো হাজারো নিষ্পাপ শিশুর আর্তনাদ আজ বাতাসে ভাসছে। কিন্তু আমরা কি সত্যিই তাদের কান্না শুনি? নাকি একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর কিছুদিন কাঁদি, প্রতিবাদের ঝড় তুলি, তারপর আবার ভুলে যাই?
এটাই কি আমাদের দায়িত্ববোধ? শুধুই মিছিল, শোক, ফেসবুক স্ট্যাটাস, ব্যানার হাতে লোক দেখানো প্রতিবাদ?
আছিয়া আজ আমাদের লজ্জার প্রতীক। তার সাথে যা হয়েছে, তা শুধু বর্বরতা নয়, তা আমাদের সমাজের চরম ব্যর্থতার চিত্র। আজ আছিয়া ধর্ষিত হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে, আমরা শোকাহত হয়েছি। কিন্তু কাল নতুন কোনো আছিয়া হারিয়ে যাবে আর আমরা নতুন কোনো প্রতিবাদ নিয়ে রাজপথে নামব। এই চক্র কি কখনো শেষ হবে না?
শুধু ফেসবুকে পোস্ট দিলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। প্রতিবাদ হতে হবে নিরবিচারে, নিয়মিত। অপরাধীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে সমাজের প্রতিটি স্তরে।
আবেগ নয়, চাই স্থায়ী পরিবর্তন
আছিয়ার জন্য আমাদের চোখে জল এসেছে, কিন্তু এই কান্না যদি আমাদের ভিতর থেকে না বদলায়, তাহলে কিছুদিন পর আবার আমরা স্বাভাবিক হয়ে যাব, আরেকটা ঘটনা না ঘটার আগ পর্যন্ত।
আমাদের এই লোক দেখানো আবেগের চেয়ে দরকার কঠোর অবস্থান, কার্যকর পদক্ষেপ, এবং সমাজ পরিবর্তনের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। ধর্ষণমুক্ত সমাজ গড়তে হলে শুধু কাঁদলে হবে না, জাগতে হবে— স্থায়ী পরিবর্তনের জন্য, সত্যিকারের সুবিচারের জন্য।
এবার কি আমরা সত্যিই বদলাব? নাকি আরেকটি আছিয়া আমাদের সামনে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করব?
আছিয়ার আর্তনাদ আমাদের বিবেককে কাঁপিয়ে দিয়েছে। তার ছোট্ট শরীরটা সহ্য করতে পারেনি নরপিশাচদের পাশবিক অত্যাচার। কিন্তু আমরা কি এই প্রথমবার এমন কিছু দেখলাম? এর আগেও বহু আছিয়া, তনু, নুসরাত, আশারার জীবন শেষ হয়ে গেছে পাশবিকতার শিকার হয়ে। প্রতিবারই আমরা কাঁদি, প্রতিবারই আমরা শোকসভা করি, প্রতিবাদে সোচ্চার হই, কিন্তু আসলেই কি কিছু বদলায়?
আমাদের দেশের চিত্র একটাই— একটা ঘটনা ঘটে, আমরা চিৎকার করি, মিডিয়া সরব হয়, কিছুদিন পর আমরা ভুলে যাই। তারপর আবার নতুন একটা ঘটনা, আবার আমাদের লোক দেখানো প্রতিবাদ। এভাবেই চলছে, চলবে!
সমাজের ব্যর্থতা, রাষ্ট্রের উদাসীনতা
এই অপরাধগুলো শুধু কিছু নরপিশাচের কাজ নয়, বরং এটি একটি পচে যাওয়া সমাজব্যবস্থার প্রতিফলন। যেখানে—
- ধর্ষকের শাস্তি হয় না, বরং ভিকটিমকে দোষারোপ করা হয়।
- ক্ষমতাবান অপরাধীরা পার পেয়ে যায়, কারণ তারা রাজনৈতিক আশ্রয়ে নিরাপদ।
- শিশুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় পরিবার, সমাজ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী— সবাই।
- ধর্ষণ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপের চেয়ে ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়াতেই মনোযোগ বেশি।
তাহলে এই দেশ কি সত্যিই সবার জন্য নিরাপদ? এই সমাজ কি আসলেই সভ্য?
কী করা দরকার?
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি:
ধর্ষকদের এমন শাস্তি দিতে হবে, যাতে কেউ দ্বিতীয়বার এমন সাহস না পায়। ফাঁসি দিয়ে, ক্রসফায়ার দিয়ে বা শাস্তি ঘোষণা করলেই হবে না— সেটা দ্রুত কার্যকর করতেও হবে।
সামাজিক সচেতনতা:
শুধু আইনের দোহাই দিয়ে লাভ নেই, যখন পরিবার থেকেই মেয়েদের দোষারোপের শিক্ষা দেওয়া হয়, ছেলেদের শিখানো হয় "তুমি পুরুষ, তোমার সব চলবে!" এই মানসিকতা বদলাতে হবে।
ভিকটিমের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন:
ধর্ষণের শিকার নারীদের দোষারোপ করা বন্ধ করতে হবে। অপরাধীর মুখ লুকানোর কথা, ভিকটিমের নয়!
ধর্ষণের উৎস খোঁজা ও নির্মূল করা:
সমাজের মধ্যে কীভাবে বিকৃত মানসিকতার জন্ম হয়, তা নিয়ে গবেষণা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। শিশুদের ছোটবেলা থেকে সম্মতির শিক্ষা দিতে হবে।
সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে:
এটা শুধু প্রশাসনের দায়িত্ব নয়, আমাদের সকলের দায়িত্ব। পরিবারের ভেতর থেকে সচেতনতা শুরু করতে হবে। অপরাধের প্রতিবাদ করতে হবে, নিরব দর্শক হয়ে থাকলে অপরাধী আমরা নিজেরাও।
এবার কি বদলাবে কিছু?
আমরা কি সত্যিই চাই এই সমাজ বদলাক? নাকি কেবল আবেগের বন্যায় ভেসে লোক দেখানো প্রতিবাদ চালিয়ে যাব? আছিয়া আজ নেই, কাল আরেকজন থাকবে, তার পরের দিন আরেকজন— যদি আমরা আজই পরিবর্তনের শপথ না করি।
ধর্ষণ প্রতিরোধের একমাত্র উপায়— কঠোর শাস্তি, সচেতনতা, এবং মানসিকতার পরিবর্তন। এই তিনটি দিকেই যদি আমরা সত্যিকারের পদক্ষেপ নিতে পারি, তবেই হয়তো একদিন এমন বর্বরতার চিত্র বদলাতে পারব।
নইলে, এই কলম চলবে, এই প্রতিবাদ চলবে— কিন্তু ধর্ষকের সংখ্যা কমবে না!
মোহাম্মদ শেখ কামালউদ্দিন স্মরণ
লেখক ও কলামিস্ট।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী এভিনিউ, ব্লক কে, বারিধারা কূটনৈতিক অঞ্চল, ঢাকা-1212
সম্পাদক
মোহাম্মদ শেখ কামালউদ্দিন স্মরণ
নির্বাহী সম্পাদক
মোহাম্মদ শেখ শাহিনুর রহমান
প্রকাশক
আমাদের সমাজ মিডিয়া লিমিটেড
আমাদের সমাজ মিডিয়া লিঃ এর একটি প্রতিষ্ঠান।
নিউজ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭০১৮৮৪৪০৫
Email: amadersomajonline@gmail.com
বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +৮৮ ০১৭০১৮৮৪৪০৫
Email: amadersomajonline@gmail.com
©২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত |amadersomaj.com